
Home বিজ্ঞানী / Scientist > দিদার ইসলাম / Didar Islam (1967)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99847 বার পড়া হয়েছে
দিদার ইসলাম / Didar Islam (1967)
দিদার ইসলাম
Didar Islam
Home District: Magura
পারি
বারিক পরিচিতি:
কুইক রেডিও আবিষ্কারের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞানকে আর এক ধাপ এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছেন মাগুরার এক কৃতি সন্তান দিদার ইসলাম। ১৯৬৭ সালে মাগুরা জেলার হাজিপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা আমিরুল ইসলাম বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মা রওশন আরা একজন গৃহিণী। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে দিদার পঞ্চম এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মায়ের চেষ্টায় সব ভাই বোন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত। পাঁচ বোনের মধ্যে তিন বোন ডাক্তার, এক বোন ইঞ্জিনিয়ার এবং এক বোন অর্থনীতিবিদ। দিদার ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্য ভাই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
১৯৯৫ সালে সাতক্ষীরার মেয়ে ফাহমিদা সুলতানার সাথে দিদার ইসলামের বৈবাহিকজীবন শুরু হয়। স্ত্রী কম্পিউটার সায়েন্সে গ্রাজুয়েট। বর্তমানে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তাদের নয় বছরের এক কন্যা আছে।
বাল্য ও শিক্ষাজীবন:
পিতার চাকরিসূত্রে বাল্যজীবনের কিছু সময় কেটেছে পাকিস্তানে। শিক্ষাজীবন শুরুর আগে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁরা পাকিস্তানে আটকে পড়েন এবং যুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে পিতা স্বপরিবারে দেশে ফিরে আসেন। শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় নিজ গ্রাম হাজিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে এক বছর লেখাপড়া করার পর পিতার সাথে যশোর যান। অতঃপর যশোর জিলা স্কুলে ২য় শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ১৯৭৯ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৮৩ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ হতে এস. এস. সি. পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করেন এবং বায়োলজি গ্রুপে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৮৫ সালে এখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৪র্থ এবং বায়োলজি গ্রুপে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালে ইলেকট্রিক্যাল গ্রম্নপে ৪র্থ স্থান অধিকার করে উর্ত্তীর্ণ হন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই নিজ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করার পর মাস্টার্স করতে ওই বৎসরই চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা গেইন্সভিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স শেষ করেন। স্পেশালিটি ছিলো এনালগ আই. সি. ডিজাইন। পরবর্তীতে পি. এইচ. ডি. শুরু করেন কিন্তু অসমাপ্ত থেকে যায়।
কর্মজীবন:
১৯৯৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট একটি কোম্পানিতে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। এই কোম্পানিতে একটি রিসার্স প্রজেক্ট ছিলো যে, কিভাবে একটি চিপের ভেতরে একটি শর্ট রেঞ্জ রেডিও তৈরী করা যায়। একে সিঙ্গেল চিপ রেডিও বলা হয়। ১৯৯৪ সালের পরিপ্রেক্ষিতে এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যে দ্রুত অগ্রসরমান টেকনোলজির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিভাবে রেডিও টেকনোলজিটাকে খুব দ্রুত হারে ছোট ও দামে সস্তা করা যায়। দিদার ইসলাম ও তাঁর দু’জন সহকর্মীর (অরল্যান্ড এর বাসিন্দা) ওই রিসার্সে অংশ নেন। সমস্ত রেডিওকে একটি চিপের মধ্যে নিয়ে আসাটা সে সময়ের জন্য ছিলো একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এখন টেকনোলজি অনেকদূর এগিয়ে গেলেও এটি তখন কেবল শুরু হচ্ছিল মাত্র। ’৯৪ থেকে ’৯৭ সাল পর্যন্ত তিন বছর দিদার ও তাঁর দু’জন সহকর্মী মিলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রথম প্রটো টাইপটি বের করেন। এরপর এটা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া জাগায়। এর কারণ হচ্ছে এটা ছিলো একটি সাকসেসফুল সিঙ্গেল চিপ রেডিও যার সমস্ত উপাদান একটি চিপের মধ্যে। বর্তমানে এটি বাজারে কুইক রেডিও (Qwik Radio) হিসেবে বিক্রী হচ্ছে। এর মধ্যে দিদারের নিজস্ব ৮টি ইউ. এস. প্যাটেন্ট রয়েছে যার স্বত্ত্বধিকারী তিনি নিজেই। পরবর্তীতে তাঁর সেই সত্ত্বা অন্য একটা কোম্পানির কাছে বিক্রী করেন। যারা ওই একই টেকনোলজির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারের প্রায় ২০টি প্রডাক্ট বাজারে নিয়ে এসেছে। এগুলো বর্তমানে কর্ডলেস মাউস, কী বোর্ড, গাড়ীর রিমোর্ট কন্ট্রোল প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে কয়েক শ’ ফুটের মধ্যে একটা রেডিও লিং প্রয়োজন হয় সেখানে বর্তমানে এ টেকনোলজিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সারা বিশ্বে এখন এধরনের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা একটা বড় ধরনের মাইল স্টোন। সমস্ত কাজটা একটা চিপের মধ্যে নিয়ে আসাতে চিপটি বিক্রী হচ্ছে মাত্র ৫০ সেন্টে।
রেডিও অনেক আগে থেকেই আছে কিন্তু এত স্বল্প পরিসরে ও এত স্বপ্ল মূল্যে বাজরে এই প্রথম রেডিও যার আবিষ্কারক জনাব দিদার ইসলাম। এই প্রযুক্তি বাজারে আসার পর রেডিও এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিষের দাম দশ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে সেই সঙ্গে সাইজ আগের চেয়েও ছোট হয়েছে। এছাড়া রেডিও তৈরী করার জটিলতা অনেকখানি কমেছে। বর্তমানে যে কোন লোক খুব সহজেই একটা রেডিও তৈরী করতে পারে।
জনাব ইসলাম ২০০০ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানিতে কাজ করেছেন। কোম্পানির নাম এ আই টি (এনালগ ইন্টিগ্রেটেড টেকনোলজি)। ২০০১ সালে এখান থেকে বেরিয়ে মেক্সিম ইনট্রিগ্রেটার টেকনোলজি নামে আর একটি বড় কোম্পানিতে তিনি ডিজাইন ডিরেক্টর হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন।
দেশে উচ্চ প্রযুক্তির দ্বার উন্মোচনে দিদারের ভূমিকা:
নিজ দেশের প্রতি দিদারের রয়েছে গভীর ভালবাসা। আর এই ভালবাসা থেকেই তিনি তাঁর অসাধারণ মেধা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কথা ভাবলেন। ২০০৪ সালে তিনি চিন্তা করলেন বর্তমানে তিনি যে কাজটি যুক্তরাষ্ট্রতে বসে করছেন তা এখন বাংলাদেশে বসেই করা সম্ভব। কারণ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও টেকনোলজিতে কিছুটা এগিয়েছে। এখানে ইন্টারনেট সংযোগ আছে ফলে দেশে বসেই সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। আর এই চিনত্ম নিয়েই ২০০৪ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে পাওয়ার আই সি লিঃ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম উচ্চ প্রযুক্তির দ্বার উন্মোচন করেছেন।
আধুনিক বিশ্বের উচ্চ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অবদান এখনও পর্যন্ত শুন্য বলা চলে। দিদারের মতে, পাশ্চাত্যের দেশে বাংলাদেশের কোন ইমেজ নেই। বাংলাদেশকে তারা তলাবিহীন ঝুড়ি মনে করে। তাদের ধারণা, এখানে বন্যা হয় ও মানুষ না খেয়ে থাকে আর বর্তমানে সস্তা শ্রমিক নিয়োগ করে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। বাংলাদেশে উচ্চ প্রযুক্তিতে যে কিছু করা সম্ভব তারা তা বিশ্বাস করে না। প্রকৃতপক্ষে, এখানে সফটওয়ারের কিছু কাজ শুরু হলেও হার্ডওয়ারে একেবারেই শুন্য অবস্থানে বাংলাদেশ। আর এই অবস্থার একটা পরিবর্তন আনতে দিদার দেশে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করলেন পাওয়ার আইসি লিমিটেড নামক একটি কোম্পানি যেখানে মেধা খাটানোর সুযোগ পাচ্ছে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কিছু তরুণ প্রকৌশলী।
বিশ্বের খ্যাতনামা কিছু কেম্পানি যেমন: ইনটেল, মাইক্রোসফট যারা অতি উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, এখানে কাজ করছে আমাদের দেশ থেকে পাস করে যাওয়া বহু ইঞ্জিনিয়ার। তাদের মধ্যে অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা দেশে কিছু করতে চান। আর এ উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকেই একবার করে দেশে আসেন। বিরূপ পরিবেশের কারণে আবার তারা ফিরে যান। চিন্তা করেন বাংলাদেশে এ ধরণের ইনভেস্টমেন্ট অসম্ভব ব্যাপার। এক্ষেত্রে পাওয়ার আইসি তাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত এবং একটা সুযোগ যারা দেশে ফিরে এসে কিছু করতে চান।
গত দুই বছর আগে দিদার ইসলামের প্রতিষ্ঠা করা দেশের সর্বপ্রথম হাই টেকনোলজিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ডিজাইন তৈরীর কোম্পানিতে বর্তমানে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল বা কম্পিউটারের ১৫/২০ জন ছেলে মেয়ে কর্মরত। গত দু’বছরে এ কোম্পানিটি আসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে। এই প্রথম আই সি বা চিপের মত কিছু উচ্চ প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের সম্পূর্ণ ডিজাইন বাংলাদেশে বসে তৈরী করে চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে বিক্রী করছে প্রতিষ্ঠানটি। হ্যাঁ, এখন আমরা গৌরবের দাবিদার যে, কিছু উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন সার্কিটের গায়ে লেখা থাকছে মেইড ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রপ্তানি করা সার্কিটগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেট্রনিক্স দ্রব্যাদিতে যেগুলো আবার আমরা আমদানী করি। ইতোমধ্যে একটা রেফারেন্স তৈরী হয়েছে যে বাংলাদেশ উচ্চ প্রযুক্তি ডেভলপমেন্ট এবং সাপ্লাই এর ক্ষেত্রে একটি পরিচিত দেশ। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সার্কিটের প্রস্তুতকারক দেশ যেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যবহার করতে পারছে। উদ্যোক্তাদের এখন সেই ভ্রান্ত ধারণা এখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে যে বাংলাদেশে বসে উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রাংশের ডিজাইন করে প্রডাক্টশনে যাওয়া সম্ভব। এক কথায়, বাংলাদেশে প্রযুক্তির নতুন একটি দ্বার উন্মোচন করলেন দিদার ইসলাম।
দিদারের মতে, তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি কেবল বাংলাদেশে এধরনের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচন করলেন। আগামীতে বাংলাদেশে হয়তো এমন আরও কোম্পানি প্রতিষ্ঠা পাবে এবং বাংলাদেশ ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে। আর আয় করবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এবং ঘুচাবে তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম।
মূলত: দিদারের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের জন্য কিছু করা। আর এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই তাঁর সমস্ত অর্থ, মেধা ও শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাওয়ার আই সি-এর মত একটি সম্ভাবনাময় সার্কিট ডিজাইনের প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি গড়তে তাঁকে প্রতিনিয়ত প্রচুর প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। প্রধান সমস্যা হচ্ছে এখানে কোন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায় না। তাদের ডিজাইনের ক্ষেত্রে যে ম্যানুফ্যাকচারিং সাপোর্ট প্রয়োজন তার জন্য তাদেরকে যেতে হচ্ছে চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর ও জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এখানে কোন মার্কেট নেই যাদের কাছে তাদের তৈরী প্রডাক্টগুলো বিক্রী করতে পারেন। স্থানীয় বাজার ও ভোক্তা একটা বড় সমস্যা।
জনাব দিদার ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানকার বিনিয়োগকারীরা অনেক পিছিয়ে আছেন। উচ্চ প্রযুক্তিতে বিনোয়োগ করা ব্যক্তিগত ব্যবসায় এবং দেশের জন্য কতটা লাভজনক তা বোঝার মত পরিবেশ এখানকার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেই। বিনিয়োগের এই মানসিকতার কারণে আমাদের দেশ ক্রমান্বয়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ইতোমধ্যে এ ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
অবকাঠামো এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ধীর গতি একটা বড় সমস্যা। আমাদের সাবমেরিন ক্যাবলটা এখনও হাতের মধ্যে আসেনি। তথ্য পাচার হওয়ার ভয়ে আমাদের নীতি নির্ধারকরা আন্তজার্তিক সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হবার প্রস্তাব নাকচ করে দেশকে তথ্য প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে দিয়েছেন কয়েক যুগ।
এতদসত্ত্বেও জনাব দিদার ইসলাম বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ একসময় উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন দেশগুলোর কাতারে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। পাওয়ার আইসি-এর মাধ্যমে কেবলমাত্র যাত্রা শুরু হয়েছে। দিদারের মতে তাদের প্রথম মাইলস্টোনটি অর্জন করতে পেরেছেন। তাঁরা এটাকে আরও প্রসার করে একটা আন্তর্জাতিক মানের সেমি-কন্ডাক্টর কোম্পানিতে রূপান্তর করবেন। যেখানে চিপ ডিজাইন থেকে শুরু করে একটি পরিপূর্ণ দ্রব্য তৈরীর সবগুলো পর্যায় অতিক্রম করে একটি প্রডাক্ট বাজারে নিয়ে আসবেন। আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত সেমি-কনডাক্টার কোম্পানি হিসেবে তারা আত্নপ্রকাশ করবেন এবং তাদের কোম্পানির এ যাত্রা বিশ্বের বহু মানুষ জানবে। ইতোমধ্যে তাঁরা বাংলাদেশে বসেই ১০/১২ টি প্রডাক্ট ডিজাইন করেছেন যার দু’টি ইতোমধ্যে বাজারে আছে এবং অন্যগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে আছে, যেগুলো আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাজারে আসবে। আর এ ধারা অব্যহত থাকলে আশা করা যায়, আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ হাই টেকনোলজির দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।
সম্পাদনাঃ
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
শামিউল আমিন (শান্ত)
প্রথম আপডেট :
নভেম্বর ২০০৬
সর্বশেষ আপডেট :
অক্টোবর ২০১১

কুইক রেডিও আবিষ্কারের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞানকে আর এক ধাপ এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছেন মাগুরার এক কৃতি সন্তান দিদার ইসলাম। ১৯৬৭ সালে মাগুরা জেলার হাজিপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা আমিরুল ইসলাম বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মা রওশন আরা একজন গৃহিণী। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে দিদার পঞ্চম এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মায়ের চেষ্টায় সব ভাই বোন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত। পাঁচ বোনের মধ্যে তিন বোন ডাক্তার, এক বোন ইঞ্জিনিয়ার এবং এক বোন অর্থনীতিবিদ। দিদার ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্য ভাই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
১৯৯৫ সালে সাতক্ষীরার মেয়ে ফাহমিদা সুলতানার সাথে দিদার ইসলামের বৈবাহিকজীবন শুরু হয়। স্ত্রী কম্পিউটার সায়েন্সে গ্রাজুয়েট। বর্তমানে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তাদের নয় বছরের এক কন্যা আছে।
বাল্য ও শিক্ষাজীবন:
পিতার চাকরিসূত্রে বাল্যজীবনের কিছু সময় কেটেছে পাকিস্তানে। শিক্ষাজীবন শুরুর আগে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁরা পাকিস্তানে আটকে পড়েন এবং যুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে পিতা স্বপরিবারে দেশে ফিরে আসেন। শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় নিজ গ্রাম হাজিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে এক বছর লেখাপড়া করার পর পিতার সাথে যশোর যান। অতঃপর যশোর জিলা স্কুলে ২য় শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ১৯৭৯ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৮৩ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ হতে এস. এস. সি. পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করেন এবং বায়োলজি গ্রুপে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৮৫ সালে এখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৪র্থ এবং বায়োলজি গ্রুপে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালে ইলেকট্রিক্যাল গ্রম্নপে ৪র্থ স্থান অধিকার করে উর্ত্তীর্ণ হন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই নিজ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করার পর মাস্টার্স করতে ওই বৎসরই চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা গেইন্সভিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স শেষ করেন। স্পেশালিটি ছিলো এনালগ আই. সি. ডিজাইন। পরবর্তীতে পি. এইচ. ডি. শুরু করেন কিন্তু অসমাপ্ত থেকে যায়।
কর্মজীবন:
১৯৯৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট একটি কোম্পানিতে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। এই কোম্পানিতে একটি রিসার্স প্রজেক্ট ছিলো যে, কিভাবে একটি চিপের ভেতরে একটি শর্ট রেঞ্জ রেডিও তৈরী করা যায়। একে সিঙ্গেল চিপ রেডিও বলা হয়। ১৯৯৪ সালের পরিপ্রেক্ষিতে এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যে দ্রুত অগ্রসরমান টেকনোলজির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিভাবে রেডিও টেকনোলজিটাকে খুব দ্রুত হারে ছোট ও দামে সস্তা করা যায়। দিদার ইসলাম ও তাঁর দু’জন সহকর্মীর (অরল্যান্ড এর বাসিন্দা) ওই রিসার্সে অংশ নেন। সমস্ত রেডিওকে একটি চিপের মধ্যে নিয়ে আসাটা সে সময়ের জন্য ছিলো একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এখন টেকনোলজি অনেকদূর এগিয়ে গেলেও এটি তখন কেবল শুরু হচ্ছিল মাত্র। ’৯৪ থেকে ’৯৭ সাল পর্যন্ত তিন বছর দিদার ও তাঁর দু’জন সহকর্মী মিলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রথম প্রটো টাইপটি বের করেন। এরপর এটা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া জাগায়। এর কারণ হচ্ছে এটা ছিলো একটি সাকসেসফুল সিঙ্গেল চিপ রেডিও যার সমস্ত উপাদান একটি চিপের মধ্যে। বর্তমানে এটি বাজারে কুইক রেডিও (Qwik Radio) হিসেবে বিক্রী হচ্ছে। এর মধ্যে দিদারের নিজস্ব ৮টি ইউ. এস. প্যাটেন্ট রয়েছে যার স্বত্ত্বধিকারী তিনি নিজেই। পরবর্তীতে তাঁর সেই সত্ত্বা অন্য একটা কোম্পানির কাছে বিক্রী করেন। যারা ওই একই টেকনোলজির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারের প্রায় ২০টি প্রডাক্ট বাজারে নিয়ে এসেছে। এগুলো বর্তমানে কর্ডলেস মাউস, কী বোর্ড, গাড়ীর রিমোর্ট কন্ট্রোল প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে কয়েক শ’ ফুটের মধ্যে একটা রেডিও লিং প্রয়োজন হয় সেখানে বর্তমানে এ টেকনোলজিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সারা বিশ্বে এখন এধরনের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা একটা বড় ধরনের মাইল স্টোন। সমস্ত কাজটা একটা চিপের মধ্যে নিয়ে আসাতে চিপটি বিক্রী হচ্ছে মাত্র ৫০ সেন্টে।
রেডিও অনেক আগে থেকেই আছে কিন্তু এত স্বল্প পরিসরে ও এত স্বপ্ল মূল্যে বাজরে এই প্রথম রেডিও যার আবিষ্কারক জনাব দিদার ইসলাম। এই প্রযুক্তি বাজারে আসার পর রেডিও এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিষের দাম দশ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে সেই সঙ্গে সাইজ আগের চেয়েও ছোট হয়েছে। এছাড়া রেডিও তৈরী করার জটিলতা অনেকখানি কমেছে। বর্তমানে যে কোন লোক খুব সহজেই একটা রেডিও তৈরী করতে পারে।
জনাব ইসলাম ২০০০ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানিতে কাজ করেছেন। কোম্পানির নাম এ আই টি (এনালগ ইন্টিগ্রেটেড টেকনোলজি)। ২০০১ সালে এখান থেকে বেরিয়ে মেক্সিম ইনট্রিগ্রেটার টেকনোলজি নামে আর একটি বড় কোম্পানিতে তিনি ডিজাইন ডিরেক্টর হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন।
দেশে উচ্চ প্রযুক্তির দ্বার উন্মোচনে দিদারের ভূমিকা:
নিজ দেশের প্রতি দিদারের রয়েছে গভীর ভালবাসা। আর এই ভালবাসা থেকেই তিনি তাঁর অসাধারণ মেধা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কথা ভাবলেন। ২০০৪ সালে তিনি চিন্তা করলেন বর্তমানে তিনি যে কাজটি যুক্তরাষ্ট্রতে বসে করছেন তা এখন বাংলাদেশে বসেই করা সম্ভব। কারণ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও টেকনোলজিতে কিছুটা এগিয়েছে। এখানে ইন্টারনেট সংযোগ আছে ফলে দেশে বসেই সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। আর এই চিনত্ম নিয়েই ২০০৪ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে পাওয়ার আই সি লিঃ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম উচ্চ প্রযুক্তির দ্বার উন্মোচন করেছেন।
আধুনিক বিশ্বের উচ্চ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অবদান এখনও পর্যন্ত শুন্য বলা চলে। দিদারের মতে, পাশ্চাত্যের দেশে বাংলাদেশের কোন ইমেজ নেই। বাংলাদেশকে তারা তলাবিহীন ঝুড়ি মনে করে। তাদের ধারণা, এখানে বন্যা হয় ও মানুষ না খেয়ে থাকে আর বর্তমানে সস্তা শ্রমিক নিয়োগ করে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। বাংলাদেশে উচ্চ প্রযুক্তিতে যে কিছু করা সম্ভব তারা তা বিশ্বাস করে না। প্রকৃতপক্ষে, এখানে সফটওয়ারের কিছু কাজ শুরু হলেও হার্ডওয়ারে একেবারেই শুন্য অবস্থানে বাংলাদেশ। আর এই অবস্থার একটা পরিবর্তন আনতে দিদার দেশে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করলেন পাওয়ার আইসি লিমিটেড নামক একটি কোম্পানি যেখানে মেধা খাটানোর সুযোগ পাচ্ছে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কিছু তরুণ প্রকৌশলী।
বিশ্বের খ্যাতনামা কিছু কেম্পানি যেমন: ইনটেল, মাইক্রোসফট যারা অতি উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, এখানে কাজ করছে আমাদের দেশ থেকে পাস করে যাওয়া বহু ইঞ্জিনিয়ার। তাদের মধ্যে অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা দেশে কিছু করতে চান। আর এ উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকেই একবার করে দেশে আসেন। বিরূপ পরিবেশের কারণে আবার তারা ফিরে যান। চিন্তা করেন বাংলাদেশে এ ধরণের ইনভেস্টমেন্ট অসম্ভব ব্যাপার। এক্ষেত্রে পাওয়ার আইসি তাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত এবং একটা সুযোগ যারা দেশে ফিরে এসে কিছু করতে চান।
গত দুই বছর আগে দিদার ইসলামের প্রতিষ্ঠা করা দেশের সর্বপ্রথম হাই টেকনোলজিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ডিজাইন তৈরীর কোম্পানিতে বর্তমানে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল বা কম্পিউটারের ১৫/২০ জন ছেলে মেয়ে কর্মরত। গত দু’বছরে এ কোম্পানিটি আসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে। এই প্রথম আই সি বা চিপের মত কিছু উচ্চ প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের সম্পূর্ণ ডিজাইন বাংলাদেশে বসে তৈরী করে চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে বিক্রী করছে প্রতিষ্ঠানটি। হ্যাঁ, এখন আমরা গৌরবের দাবিদার যে, কিছু উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন সার্কিটের গায়ে লেখা থাকছে মেইড ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রপ্তানি করা সার্কিটগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেট্রনিক্স দ্রব্যাদিতে যেগুলো আবার আমরা আমদানী করি। ইতোমধ্যে একটা রেফারেন্স তৈরী হয়েছে যে বাংলাদেশ উচ্চ প্রযুক্তি ডেভলপমেন্ট এবং সাপ্লাই এর ক্ষেত্রে একটি পরিচিত দেশ। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সার্কিটের প্রস্তুতকারক দেশ যেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যবহার করতে পারছে। উদ্যোক্তাদের এখন সেই ভ্রান্ত ধারণা এখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে যে বাংলাদেশে বসে উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রাংশের ডিজাইন করে প্রডাক্টশনে যাওয়া সম্ভব। এক কথায়, বাংলাদেশে প্রযুক্তির নতুন একটি দ্বার উন্মোচন করলেন দিদার ইসলাম।
দিদারের মতে, তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি কেবল বাংলাদেশে এধরনের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচন করলেন। আগামীতে বাংলাদেশে হয়তো এমন আরও কোম্পানি প্রতিষ্ঠা পাবে এবং বাংলাদেশ ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে। আর আয় করবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এবং ঘুচাবে তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম।
মূলত: দিদারের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের জন্য কিছু করা। আর এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই তাঁর সমস্ত অর্থ, মেধা ও শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাওয়ার আই সি-এর মত একটি সম্ভাবনাময় সার্কিট ডিজাইনের প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি গড়তে তাঁকে প্রতিনিয়ত প্রচুর প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। প্রধান সমস্যা হচ্ছে এখানে কোন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায় না। তাদের ডিজাইনের ক্ষেত্রে যে ম্যানুফ্যাকচারিং সাপোর্ট প্রয়োজন তার জন্য তাদেরকে যেতে হচ্ছে চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর ও জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এখানে কোন মার্কেট নেই যাদের কাছে তাদের তৈরী প্রডাক্টগুলো বিক্রী করতে পারেন। স্থানীয় বাজার ও ভোক্তা একটা বড় সমস্যা।
জনাব দিদার ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানকার বিনিয়োগকারীরা অনেক পিছিয়ে আছেন। উচ্চ প্রযুক্তিতে বিনোয়োগ করা ব্যক্তিগত ব্যবসায় এবং দেশের জন্য কতটা লাভজনক তা বোঝার মত পরিবেশ এখানকার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেই। বিনিয়োগের এই মানসিকতার কারণে আমাদের দেশ ক্রমান্বয়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ইতোমধ্যে এ ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
অবকাঠামো এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ধীর গতি একটা বড় সমস্যা। আমাদের সাবমেরিন ক্যাবলটা এখনও হাতের মধ্যে আসেনি। তথ্য পাচার হওয়ার ভয়ে আমাদের নীতি নির্ধারকরা আন্তজার্তিক সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হবার প্রস্তাব নাকচ করে দেশকে তথ্য প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে দিয়েছেন কয়েক যুগ।
এতদসত্ত্বেও জনাব দিদার ইসলাম বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ একসময় উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন দেশগুলোর কাতারে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। পাওয়ার আইসি-এর মাধ্যমে কেবলমাত্র যাত্রা শুরু হয়েছে। দিদারের মতে তাদের প্রথম মাইলস্টোনটি অর্জন করতে পেরেছেন। তাঁরা এটাকে আরও প্রসার করে একটা আন্তর্জাতিক মানের সেমি-কন্ডাক্টর কোম্পানিতে রূপান্তর করবেন। যেখানে চিপ ডিজাইন থেকে শুরু করে একটি পরিপূর্ণ দ্রব্য তৈরীর সবগুলো পর্যায় অতিক্রম করে একটি প্রডাক্ট বাজারে নিয়ে আসবেন। আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত সেমি-কনডাক্টার কোম্পানি হিসেবে তারা আত্নপ্রকাশ করবেন এবং তাদের কোম্পানির এ যাত্রা বিশ্বের বহু মানুষ জানবে। ইতোমধ্যে তাঁরা বাংলাদেশে বসেই ১০/১২ টি প্রডাক্ট ডিজাইন করেছেন যার দু’টি ইতোমধ্যে বাজারে আছে এবং অন্যগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে আছে, যেগুলো আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাজারে আসবে। আর এ ধারা অব্যহত থাকলে আশা করা যায়, আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ হাই টেকনোলজির দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।
সম্পাদনাঃ
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
শামিউল আমিন (শান্ত)
প্রথম আপডেট :
নভেম্বর ২০০৬
সর্বশেষ আপডেট :
অক্টোবর ২০১১