
Home রাজনীতিবিদ / Politicians > বিমল রায় চৌধুরী / Bimol Roy Chowdhury (1925)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 91538 বার পড়া হয়েছে
বিমল রায় চৌধুরী / Bimol Roy Chowdhury (1925)
বিমল রায় চৌধুরী
Bimol Roy Chowdhury
Home District: Jessore

বিমল রায় চৌধুরী ১৯৪২ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে কলকাতায় ক্যাম্বেল হাসপাতালে

বিমল রায় চৌধুরী যশোর জিলা স্কুলে পড়াকালীন ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ১৯৩৬ সালে জিলা স্কুলে পড়াকালীন ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান করেন রহর। কলেজে পড়াকালীন মৎস্যজীবী ও কৃষক সমিতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৫ সালে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ১৯৪৮ সালে বি. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি অথবা ব্যবসার দিকে না ঝুঁকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ১৯৪৯ সালে তে-ভাগা আন্দোলনে বাঘারপাড়া ও নড়াইলের নমঃশূদ্র অধ্যূষিত এগারখান অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করেন। এ আন্দোলনে জড়িত থাকার অপরাধে তিনি গ্রেফতার হন এবং এক মাস পর মুক্ত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার হন এবং ১৫ দিন পরে মুক্তি পান। ১৯৫৪ সালের ৩০ মে আবার তিনি ৫৪ ধারায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৫৬ সালে মুক্তি পান। কারাগারে আন্দোলন করার অপরাধে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই মাস, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে তিন মাস ও কুমিল্লা কারাগারে ২ মাস রাজবন্দী হিসেবে কারাযাপন করেন এবং বাকী সময় তিনি ঢাকা ও বহরমপুর কারাগারে বন্দী থাকেন। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৫৮ সালে সিকিউরিটি এ্যাক্ট এর আওতায় তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং দুই মাস পরে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে জড়িত থাকেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ইণ্ডিয়া যুদ্ধের সময় তিনি গ্রেফতার হন এবং কিছুদিন পর মুক্তি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের তে-ভাগা আন্দোলন মেনে নিয়ে সমাজতান্ত্রীক সরকার কায়েমের শর্তে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যূত্থানে তিনি জড়িত থাকেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মার্চ মাসে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে বোমা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন। ২৮ মার্চ পুলিশ লাইন থেকে বাঙ্গালী পুলিশ বের হয়ে আসে। ২৯ মার্চ যশোর জেলখানা আক্রমণ ও জেলবন্দীদের মুক্তিতে সহায়তা করেন। ঐ দিন রাতে ই.পি.আর, পুলিশ ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের আর্মিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ৩১ মার্চ পাক আর্মিরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে নওয়াপাড়া চৌধুরী বাড়ী আক্রমণ করে। ৮ এপ্রিল কেশবপুর, সাতক্ষীরায় অবস্থান করেন। ১৮ এপ্রিল ভারত গমণ করেন এবং বনগাঁ ক্যাম্পে ৪টি মুক্তিযুদ্ধের শিবিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮ আগস্ট তিনি পলিটিক্যাল লিয়াঁজো হিসেবে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গোহাটি ও সিলং থেকে মুক্তিযুদ্ধের পলিটিক্যাল ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ৭ ডিসেম্বর যশোরে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৪ সালে বাকশাল রাজনীতির সাথে জড়িত হন। বেশ কয়েকবার কারাবাস সত্ত্বেও তিনি রাজনৈতিক অঙ্গণ ত্যাগ করেননি। ৭১ পরবর্তী সময় তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত থাকেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সিনিয়র সদস্য।
বিমল রায় চৌধুরী ১৯৬৪ সালে বি. ডি সিস্টেমে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সদস্য হন এবং ঐ বছরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। একটানা ১৯৮৮ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে তিনি যশোর বোর্ড ও যশোর পলিটেকনিক ইসটিটিউট প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সময়ে ১৩ হতে ৫৪টি মসজিদ ও ৩ থেকে ৮টি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বাহাদুরপুর হাইস্কুল, নবনাগরী গার্লস স্কুল, তালবাড়িয়া হাইস্কুল, ঘুরুলিয়া হাইস্কুল, পাঁচবাড়িয়া গার্লস স্কুল ও মোমিননগর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সমাজসেবামূলক অসংখ্য সংগঠনের সাথে জড়িত থাকেন। তিনি জে. ডি. এস-এর জীবন সদস্য ও তিন বার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, এভারগ্রীণ ক্লাব ও এম. এস ক্লাবের সেক্রেটারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফুটবল, ক্রিকেট, বাসকেট বল, ভলিবল, তাস, কাবাডি ও কেরাম খেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন। তিনি হেমায়েতপুর পাবনায় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎ সংঘের সভাপতি, ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফেডারেশন (কাঠমুণ্ডু নেপাল) এর সদস্য, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের (ঢাকা) প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ (ঢাকা) এর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিরামপুর নওয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ মহল্লা প্রাথমিক বিদ্যালয় যশোর এর সভাপতি এবং শিলা রায় চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্য এবং যশোর বি. আর. টি. এ এর সদস্য। তিনি যশোরের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম অভিনেতা ও সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যশোর ইনসটিটিউট পাবলিক লাইব্রেরীর বিভিন্ন বিভাগের সম্পাদক থেকে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যশোর ইসটিটিউটের (১৯৫২-১৯৯৮) আজীবন সদস্য। তিনি ১৯৫২-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত নাট্যকলা সংসদের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যশোর চেম্বর অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। শিল্পকলা একাডেমীর সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি অসংখ্য শিক্ষালয়সহ হিন্দু-মুসলিম ও বিভিন্নজাতির ধর্ম উপসনালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সংস্কৃতি সেবক এবং কুসংস্কার বিরোধী। সমাজ থেকে কুসংস্কার নির্মূল করার জন্য তিনি আত্মনিবেদিত। তাঁর মত এ ধরণের সমাজসেবক ও দেশ দরদী ব্যক্তি সত্যিই বিরল।
বিমল রায় চৌধুরী ১৯৫২ সালে কেশবপুর মঙ্গলকোট গ্রামের বিমলকৃষ্ণ ঘোষের কন্যা শিলা রায় ঘোষকে বিবাহ করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি এক ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানের জনক।
তথ্য সংগ্রহ:
হাবিব ইবনে মোস্তফা
তথ্য সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
জানুয়ারী ২০১২