
Home সাহিত্যিক / Litterateur > বিজয় সরকার / Bijoy Sarkar (1903-1985)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 132102 বার পড়া হয়েছে
বিজয় সরকার
Bijoy Sarkar
Home District: Narail
পারিবারিক পরিচিতি:
“এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে”- বিখ্যাত এই মরমী গানের স্রষ্টা বিজয়কৃষ্ণ অধিকারী ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী মাসে নড়াইল জেলার সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সংগীত অনুরাগী পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী এবং মাতা হিমালয় কুমারী বৈরাগী। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। বিজয়কৃষ্ণ পিতৃপ্রদত্ত খেতাব বৈরাগী পরিবর্তন করে অধিকারী খেতাবই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
বিজয় সরকারের শিক্ষাজীবন শুরু হয় জ্যাঠাতুত ভাই অভয় চন্দ্রের বাড়ীতে। সেখানে কিছুদিন লেখাপড়ার পর তাঁর পিতা নবকৃষ্ণ তাঁকে গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। পাঠশালায় অধ্যয়ন শেষ করে বিজয় ভর্তি হন হোগলাডাঙ্গা ইউ, পি, স্কুলে এবং পরবর্তীতে বাঁশগ্রাম এম. ই. স্কুলে। এখানে কিছুদিন পড়াশোনার পর তিনি ভর্তি হন সিংগাশোলপুর কে. পি. ইন্সটিটিউশনে এবং সেখান থেকেই ১৯২৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন।
টাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তাঁর পেশাগতজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি কিছুদিন গোপালপুর কাচারীর নায়েবের দায়িত্ব পালন করেন।
সঙ্গীতজীবন:
বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরোতে না পারলেও স্কুলজীবন থেকেই তিনি গান রচনা ও সুর করে নিজে গাইতেন। পাঠশালার শিক্ষক নেপাল বাবুর কণ্ঠও ছিল অতিশয় মধুময়। তাঁরই উৎসাহ ও প্রশিক্ষণেই বিজয় সরকারের সংগীত জীবনের ভিত্তি রচিত হয়। শিশুকাল থেকে তার প্রতিভা বিমোহিত হয়ে তৎকালীন সময়ে বিখ্যাত লোক
কবি মনোহর সরকার মুগ্ধ হন। কিশোর বিজয় সংগীত চর্চার পাশাপাশি গ্রামে মঞ্চস্থ বিভিন্ন যাত্রায়ও অংশগ্রহণ করতেন।
১৯৩৩ সালে বিজয় সরকার ফরিদপুরের দুর্গাপুর গ্রামের মানোহর সরকারের বাড়ীতে কবিগানের দীক্ষাগ্রহণের জন্য যান এবং সেখানে দীর্ঘ দুই বছর শিক্ষালাভ করেন। তিনি খুলনার রাজেন সরকারের নিকটও বছর খানেক কবি গানের শিক্ষালাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি কবি গানের দল গঠন করে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রানত্মরের মানুষকে গান শুনিয়ে তাদের মন জয় করেন। অর্ধ শতাব্দীব্যাপী উদাত্ত মধুর সুরেলাকণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করে মাতিয়ে রেখেছিলেন পল্লী বাংলার মানুষের মনকে। বিজয় সরকার বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন স্থানে কবি গান পরিবেশন করে ব্যাপক খ্যাতি ও প্রচুর অর্থ অর্জন করেন।
বাংলাদেশের কবি গানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে কবিয়াল বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য। গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারণ মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছেন।
প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সংগীত সাধক মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষনিকভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন। বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন বলেছেন,“ মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।” দীর্ঘ সংগীত সাধনার জীবনে তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগান, ইসলামীগান, আধ্যাত্নিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম, শ্রেণী সংগ্রাম ইত্যাদি।
এই যশস্বী শিল্পীর দরাজ কণ্ঠের কবি গান শুনে অনেক গুণীজন মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি একাধিকবার কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারম্ন শিল্পী এস.এম, সুলতানসহ অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন।
১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিজয় সরকারের গান শুনে মুদ্ধ হয় এবং আর্শীবাদ করেন।
১৯৩৭ সালে কলকাতার বিধান স্ট্রীটের রামকৃষ্ণ বাগচী লেনের এক দ্বিতল বাড়ীতে কবি গোলাম মোস্তফা, কবি জসীম উদ্দিন ও গায়ক আব্বাস উদ্দীনের সাক্ষাৎ লাভ করেন। বিজয় সরকার এই স্মরণীয় মুহুর্তে এই বিচ্ছেদ গানটি পরিবেশন করে তাঁদেরকে অভিভূত করে দিয়েছিলেন। গানটির কিছু অংশ :
সজনী ছুঁসনে আমারে
গৌররূপে নয়ন দিয়ে আমার জাত গিয়েছে
আমাকে স্পর্শ করিসনে যার কুল মানের ডর আছে।
১৯৮৩ সালে কলকাতা থেকে বিজয় সরকার রচিত ২৭০টি গান নিয়ে বিজয় সরকারের গানের সংকলন প্রকাশিত হয়।
সম্মাননা:
১৯৩৭ সালে ১ অক্টোবর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ভবনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে কবিয়াল বিজয় সরকার কবি গান পরিবেশন করে খ্যাতিমান ছয় জন বরেণ্য পন্ডিতের যুক্ত সনদ লাভ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী কলকাতার “ভারতীয় ভাষা পরিষদ” তাকে সংবর্ধিত করে। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
পরোলোক গমন:
দীর্ঘকাল মানুষকে গান শুনিয়ে বার্ধক্যজীবনে বিজয় সরকার পশ্চিম বাংলার কেউটিয়ায় নিজগৃহে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরম্ন করেন। শেষ জীবনে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধত্বের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেন। এই দেশ বরেণ্য চারণ কবি, কবিগান গায়ক বিজয় সরকার ১৯৮৫ সালে ৪ ডিসেম্বর বুধবার ৮১ বছর বয়সে বন্যা কানন বিশ্বাসের বেলুড়ের বিধান পল্লীস্থ বাড়ীতে মৃত্যুবরণ করেন।
কবিয়াল বিজয়ের কয়েকটি অসম্ভব জনপ্রিয় গান হলো:
১. পোষাপাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে
২. এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে
৩. কালার প্রেমে এতো জ্বালা হারে আমি আগে জানি নাই
৪. আল্লাহ রসুল বল মোমিন আল্লাহ রসুল বল
৫. নকশি কাঁথার মাঠেরে আজও কাঁদে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি
৬. শুধু পাষাণ নয় এই তাজমহলের পাথর
৭. আমি কৃঞ্চ বলিয়া ত্যাজিব পরাণ যমুনার তীরে
৮. আমায় পাগল পাগল করেছে কালার বাঁশিতে
৯. তুমি জানোনা’রে প্রিয়
১০. সুন্দর এই পৃথিবী
১১. কি সাপে কামড়াইলো
১২. জানিতে চাই দয়াল
১৩. পরবাসি হইয়া
তথ্য সূত্র:
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক : কাজী শওকত শাহী
/
মাহাবুবুর রশিদ লাভলু
সাংবাদিক, দিগন্ত টেলিভিশন, নড়াইল
/
গুণীজন.কম ওয়েবসাইট
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
ছবি:
সরদার ফরিদ আহমেদ
সর্বশেষ আপডেট:
অক্টোবর ২০১১
goonijon.com
somewhereinblog.net
(৭টি গান ডাউনলোড করুন)
wikipedia.org
somoynews.tv
amarblog.com
shobdoneer.com
bangladeshnews24x7.com