যশোর জেলার গুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিত একটি স্থানের নাম রাজারহাট পিকনিক কর্ণার ‘ক্ষনিকা’। এর মধ্যে রয়েছে বিশাল এক অতি প্রাচীন দিঘি। জানা যায় আজ হতে প্রায় ৬০০ বছর আগে দরবেশ খান জাহান আলী ঝিনাইদহের বারবাজার হতে মুড়লী হয়ে বাগেরহাটে যাত্রা পথে দীঘিটি খনন করেন। ৫৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাজারহাটের এই পিকনিক কর্ণারটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু বিশাল আয়তনের এই বিনোদন কেন্দ্র অনেক বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এক সময় রাজারহাটের পিকনিক কর্ণারে পিকনিক করতে মানুষ দুর দুরান্ত থেকে দলে দলে বাস ভর্তি করে ছুটে যেতেন নির্মল হাওয়ায় চিত্তবিনোদনের জন্য। দক্ষিণ পাড়ের ছাউনিতে বসে মানুষ আড্ডা দিত। হাসি তামশা করত অবসর সময়ে। দিঘীতে সাঁতার কাটত। বুক ভরে নির্মল হাওয়া খেত। সে এক মনোরম পরিবেশ। বড় দীঘির চারপাশে শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতী এমনকি বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের মিলনমেলায় পরিনত হতো। পিকনিক কর্ণারের একদিকে যশোর খুলনা মহাসড়ক, আরেক দিকে রেল লাইন। মাঝখানে বিশাল এলাকা জুড়ে বাজারহাট। বাজারের অদুরে পিকনিক কর্ণার ক্ষণিকা স্থাপিত হবার সময় গোটা দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল।
বর্তমানে সেখানে নূন্যতম সেই পরিবেশ নেই্। এখন সেখানে জঙ্গলে ঢেকে গেছে। আগের মতো কেউ এখন আর পিকনিকের জন্য কিংবা চিত্তবিনোদনের জন্য আসে না এখানে। কালেভদ্রে পিকনিক কিংবা কেউ চিত্তবিনোদনের জন্য ঘুরতে গেলেও ক্ষণিকের জন্য। কারণ বেশিক্ষণ সেখানে অবস্থান করাটা নিরাপদ নয়, এমনকি দিনের বেলাতেও। সন্ধ্যার আগেই নিঝুমপুরীতে পরিনত হয়। কেউ সাহস করে ক্ষণিকার পাশ দিয়ে চলাচল করতেও সাহস পায় না। জানা গেছে ক্ষণিকা পিকনিক স্পট এখন পুরোপুরি ক্রাইম স্পটে পরিনিত হয়েছে। এলাকার ডাকাত, ছিনতাইকারী, মাদকসেবী ও কলগার্লদের প্রতিদিনের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। যদিও বর্তমান অবস্থায় তাদের দৌরাত্ব কিছুটা কমেছে। তারপরেও ফেনসিডিলখোরদের আড্ডা বসে মাঝে মধ্যে।
‘ক্ষণিকা’ ছিল যশোরের অন্যতম চিত্তবিনোদনের স্থান। গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি ব্যবহার উপোযোগী করার কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যশোর শহরতলী বাহাদুরপুরের জেস গার্ডেন ও সেনানিবাস এলাকার বিনোদিয়া পার্ক ঠিকই লাভজনক হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষনিকার আজ এ আবস্থা।
মূল্যবান সরকারী সম্পত্তি ব্যবহার করে প্রতি বছর বিপুল অংকের অর্থ আয় করার সুযোগ রয়েছে। অথচ কাজে লাগানো হচ্ছে না। অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ক্ষনিকা। একজন মাত্র কেয়ারটেকার রয়েছেন নামকাওয়াস্তে। সে থাকে সবসময় ভয়ে ভয়ে। কারণ এলাকাটি ক্রাইম পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। অথচ পিকনিক কর্ণারটি বাংলাদেশ সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে। জানা যায় অর্থাভাবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পিকনিক কর্নারটি যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। লোকবলের অভাবে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়তি কোনো কেয়ারটেকার দেয়া সম্ভব হয় না। অথচ আগে যেখানে ৪ জনের একটি টীম সার্বক্ষনিক ডিউটিতে থাকতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, যশোরের অনেক সরকারী সম্পত্তি বিভিন্ন পন্থায় ইতোপূর্বে প্রভাবশালী ক্ষমতাসীনরা দখল কিংবা লীজের নামে ভোগদখল করে নিয়েছেন। রাজেরহাট পিকনিক কর্ণারের দিকেও তাদের দৃষ্টি ছিল। তারা বহুবারই ছো মেরে ব্যর্থ হয়েছেন। মূল্যবান সরকারি এই সম্পত্তিটিতে কোনো সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কিংবা বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে দীর্ঘমেয়াদি লীজ দেয়ার ব্যবস্থা নিলে এ অঞ্চলটির আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে অনেকে মনে করেন। সরকারী সম্পত্তিটির যথাযথ ব্যাবহারের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সচেতন যশোরবাসী দাবী জানিয়েছেন। জনগণ মনে করে পিকনিক কর্ণারের বদলে যদি শিল্প কারখানা বা মৎস খামার নার্সারী করার উদ্যোগ নেওয়া হতো তাহলে এলাকার সর্বস্তর মানুষ উপকৃত হত।
যেকোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন: ০১৭১৮৯২৭১০৩ / ০১৯৬৪৬৬৪৮৪৪