
Home অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থা / Past educational system > যশোরের প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা- আপডেট চলছে
এই পৃষ্ঠাটি মোট 15044 বার পড়া হয়েছে
যশোরের প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা- আপডেট চলছে
শিক্ষা ব্যবস্থা ঃ
ভূমিকা:- বৃহত্তর যশোর জেলার শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহাসিক পটভুমি আলোচনা করতে হলে সমগ্র অতীত শিক্ষা পদ্ধতি আলোচনা করা প্রয়োজন। কারন অতীতে সমগ্র দেশে প্রায় একই শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। প্রচীন যুগে পুথিগত বিদ্যা শিক্ষার চেয়ে যুদ্ধ বিদ্যার প্রচলন ছিল বেশি যাতে প্রতিকুল পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে। সে সাথে জীবিকা অর্জনের তাগিদে ব্যবহারিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াই ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য প্রত্যেকে নিজ নিজ পেশায় দক্ষতা অর্জনের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন বোধ করত। তাই কৃষক এর ছেলে কৃষক, তাঁতীর ছেলে তাঁতী হওয়াই ¯^vfvweK কোন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা ছিল না।
অতীতে স্থানীয় ব্যবস্থায় পাঠশালা, চণ্ডীমগুপ এবং গুরুগৃহে শিক্ষা দেয়া হত। সুলতানী আমলে এদেশে বহু শিক্ষিত মুসলিম ও অমুসলিম জ্ঞানী ব্যক্তি সমাজে শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আগ্রত মুসলিম ও স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুসলিমদের নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থাও গড়ে উঠে। মুসলিমদের এ শিক্ষা ব্যবস্থা মোটামুটি ছিল মসজিদ কেন্দ্রীক। অতীতে যশোর জেলাতেও এ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাধারণভাবে আরবী ফারসী ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার ব্যবস্থাও ছিল। সে সঙ্গে টোল, পাঠশালা ও মক্তব শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানে বাংলা, সংস্কৃত, গণিত ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু-মুসলমান সবাই এ শিক্ষা গ্রহন করত। গুরুগৃহে শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও সেকালে প্রচলিত ছিল।
সুলতানী আমলে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ‘দরগাহ’ (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের) বা মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছিল। এ আমলে ইসলামী ধর্মশাস্ত্রে শিক্ষিত পীর-দরবেশগণ বিভিন্নস্থানে ‘খানকাহ’ নির্মান করে তাঁদের ছাত্রদের ইসলামী শাস্ত্রে এবং আধ্যাত্নিক উন্নতি বিষয়ে দীক্ষা দিতেন। তাঁরা ছাত্রদের ধর্মীয় শিক্ষার সাথে চিকিৎসা শাস্ত্রেও জ্ঞানদান করতেন।
পাঠান আমলে শিক্ষা ব্যবস্থার কোন আমুল পরিবর্তন ঘটেনি। মোগল আমলে এদেশের মুসলিমগণ শিক্ষা-দীক্ষায় মোটামুটি উন্নত ছিল। তৎকালে মুসলমানদের শিক্ষা m¤^‡Ü উইলিয়াম এ্যাডাম (ডরষষরস অফধস) মন্তব্য করেন যে, এ দেশে মুসলিমগন বহু বেসরকারী বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁরা শিক্ষাকে পেশা ও জীবিকা নির্বাহের উপায় বলে গ্রহন করেননি। তাঁরা একে ন্যায় ও পূণ্যের কাজ বলে মনে করতেন। সে আমলে প্রথম পর্যায়ের শিক্ষা বাংলা ভাষার এবং উচ্চ শিক্ষা আরবী ও ফারসী ভাষার দেয়া হত। কিন্তু বহিরাগত মুসলিমগণ, বিশেষ করে পশ্চিম ও উত্তর ভারতীয় মুসলিমগণ ফারসী ও উর্দুভাষা ব্যবহার করতেন। মুসলমান সমাজের অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে মেয়েরা মসজিদে কুরআন শিক্ষার সাথে এক বা একাধিক বিষয় যেমন বাংলা, গনিত, আরবী, ফারসী ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানলাভ করত। বিত্তশালী লোকেরা নিজকর জমি, ওয়াকফ ও লাখেরাজ সম্পত্তি দান করে এ শিক্ষা ব্যবস্থা উৎসাহ দিতেন।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজ বনিকদের হাতে এদেশের শাসনভার চলে যায়। শাসনভার গ্রহণে করার পর ইংরেজ সরকার বহুদিন পর্যন্ত এদেশের অধিবাসীদের জ্ঞান বিজ্ঞান শেখানোর জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। খ্রিস্টান মিশনারীরা ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রথমে নিজেরা বাংলা শেখেন এবং বাঙ্গালীদের ইংরেজী শেখানোর ব্যাপারে আগ্রহি হন। বিভিন্ন মিশরীয় সোসাইটি দেশের নানাস্থানে স্কুল স্থাপন করেন। এসব স্কুলে বাংলা এবং ইংরেজীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানদান করা হত। ইংরেজ ও বাঙ্গালী ধনী লোকেরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থদান করতেন।
মিশনারী ম্যাকসমুলার কর্তৃক ১৭৫৭খ্রিস্টাব্দের জরিপ থেকে এদেশের তৎকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার একটা আভাস পাওয়া যায়।১ এখানে তখন যথেষ্ট সংখ্যক স্থানীয় বিদ্যালয় ছিল। মুসলিমদের জন্য ছিল মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তব ও মাদ্রাসা, আর হিন্দুদের জন্য ছিল মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তব ও মাদ্রাসা, আর হিন্দুদের জন্য ছিল মন্দির কেন্দ্রিক টোল ও পাঠশালা। আর ছিল পারিবারিক স্কুল। মক্তবের ওস্তাদ ও টোলের গুরুমশায়রা প্রাথমিক ভাষা, অঙ্ক, ব্যাকরণ, দলিলপত্র লিখন সংক্রান্ত হস্তলিখিত নিজস্ব বইপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদান করতেন। শিক্ষকগন নিজেরাই পাঠ্যপুস্তক তৈরী করতেন এবং শিক্ষা সমাপ্তির পর তাঁরাই ছাত্রদের উপাধি দান করতেন। পড় শেখানোর বিনিময়ে শিক্ষকগন ছাত্রদের নিকট থেকে গুরুদক্ষিনা লাভ করতেন। সরকার ও বিত্তশালী লোকেরা সে সব প্রতিষ্ঠানে অর্থদান করতেন। পারিবারিক বিদ্যালয়ে উচ্চ শ্রেণীর মুলমানগন তাঁদের নিজেদের এবং প্রতিবেশীর ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিতেন। এখানে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থাও ছিল২।
ইংরেজদের হাতে এদেশের প্রশাসনিক ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর মুসলমানদের অবস্থা সকল দিক থেকে দ্রুতগতিতে খারাপ হতে থাকে। ১৭৯৩খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুসলমান জমিদারেরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তবুও ওয়াকফ লাখেরাজ সম্পত্তির সহায়তায় মুসলিমদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ কিছু কাল টিকে ছিল। কালক্রমে সে সব সম্পত্তি হস্তচ্যুত হয়ে পড়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অবলুপ্ত হতে থাকে।
১৮৩৫-৩৮খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উইলিয়াম এড্যাম সরকরের কাছে তিনটি রিপোট পেশ করেন। তাতে দেখা যায়, এ দেশে মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৮৫৪খ্রিস্টাব্দে মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তবে সরকারী সাহায্য বদ্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মুসলমানদের ঐতিহ্য বাহী শিক্ষার ব্যাহত হয়১।
অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থা:- যশোর জেলার অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার অগ্রগতি আলোচনা প্রসঙ্গে যশোর জেলা গেজেটিয়ারে (১৯১২) ও ম্যালি (ঙ্থগধষষবু) উল্লেখ করেছেন যে সমগ্র জেলায় ১৮৯০-৯১সনে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১,০৬৩ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৩০,৩৭৯জন।
১৯০০-০১সনে বিদ্যালয়ের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৯৭৯টিতে দাঁড়ায় কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪,৮৭৮ জন হয়। পরবর্তী দশকে ১৯১০-১১সনে বিদ্যালয়ের সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধিপেয়ে ১, ৪৫০টি হয় এবং আলোচ্য সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিশেষ ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩,০৭০জন হয়।
১৯০০-০১সনে ও’ম্যালীর গেজেটিয়ারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিদ্যালয়ে যাওয়ার মত বয়ঃপ্রাপ্ত বালকদের মধ্যে শতকরা ৩০.৩৬জন এবং বালিকাদের মধ্যে শতকরা ৪.২জন অধ্যয়নরত ছিল। প্রতি ৩.৩টি গ্রামের মধ্যে ১টি করে বিদ্যালয় ছিল। সমগ্র জেলার বিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন ডিপুটি ইন্সপেক্টর এবং তাকে সহায়তা করার জন্য ১জন অতিরিক্ত ডিপুটি ইন্সপেক্টর, ৯জন সাব-ইন্সপেক্টর, ৯জন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর ও ৭জন ইন্সপেক্টিং পন্ডিত ছিলেন। উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখিত সময়ে ও সমগ্র জেলার ১টি মাত্র কলেজ নড়াইল মহকুমায় অবস্থিত ছিল-নাম ভিক্টোরিয়া কলেজ। কলেজটি নড়াইলের বাবু রামরতন রায় কর্তৃক মূলতঃ একটি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৬সনে উক্ত-বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীসমূহ প্রবর্তন করার ফলে বিদ্যালয়টি একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে রূপান্তরিত হয়। এভাবে চার বছর চলার পর ১৮৯০সনে স্নাতক শ্রেণীর বিষয় সমূহ পড়ানো হলে প্রথম শ্রেণীর কলেজে উন্নীত হয়। আলোচ্য শতাব্দীর সমাপ্তি পর্যন্ত কলেজটির উক্ত মান অক্ষুন্ন থাকে। অতঃপর স্নাতক শ্রেণীসমূহ বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীসমূহ পূর্বের ন্যায় চালু থাকে। কলেজের শিক্ষক মন্ডলীতে ছিলেন ১জন অধ্যক্ষ, ১জন ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক, ১জন অঙ্ক শাস্ত্রের অধ্যাপক ও ২জন সংকৃতের অধ্যাপক। কলেজ সংলগ্ন ১টি ছাত্রাবাস ও ১টি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় ছিল। কলেজের অধ্যক্ষ এ দুটির তত্ত্বাবধায়ন করতেন।
ভূমিকা:- বৃহত্তর যশোর জেলার শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহাসিক পটভুমি আলোচনা করতে হলে সমগ্র অতীত শিক্ষা পদ্ধতি আলোচনা করা প্রয়োজন। কারন অতীতে সমগ্র দেশে প্রায় একই শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। প্রচীন যুগে পুথিগত বিদ্যা শিক্ষার চেয়ে যুদ্ধ বিদ্যার প্রচলন ছিল বেশি যাতে প্রতিকুল পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে। সে সাথে জীবিকা অর্জনের তাগিদে ব্যবহারিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াই ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য প্রত্যেকে নিজ নিজ পেশায় দক্ষতা অর্জনের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন বোধ করত। তাই কৃষক এর ছেলে কৃষক, তাঁতীর ছেলে তাঁতী হওয়াই ¯^vfvweK কোন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা ছিল না।
অতীতে স্থানীয় ব্যবস্থায় পাঠশালা, চণ্ডীমগুপ এবং গুরুগৃহে শিক্ষা দেয়া হত। সুলতানী আমলে এদেশে বহু শিক্ষিত মুসলিম ও অমুসলিম জ্ঞানী ব্যক্তি সমাজে শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আগ্রত মুসলিম ও স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুসলিমদের নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থাও গড়ে উঠে। মুসলিমদের এ শিক্ষা ব্যবস্থা মোটামুটি ছিল মসজিদ কেন্দ্রীক। অতীতে যশোর জেলাতেও এ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাধারণভাবে আরবী ফারসী ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার ব্যবস্থাও ছিল। সে সঙ্গে টোল, পাঠশালা ও মক্তব শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানে বাংলা, সংস্কৃত, গণিত ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু-মুসলমান সবাই এ শিক্ষা গ্রহন করত। গুরুগৃহে শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও সেকালে প্রচলিত ছিল।
সুলতানী আমলে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ‘দরগাহ’ (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের) বা মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছিল। এ আমলে ইসলামী ধর্মশাস্ত্রে শিক্ষিত পীর-দরবেশগণ বিভিন্নস্থানে ‘খানকাহ’ নির্মান করে তাঁদের ছাত্রদের ইসলামী শাস্ত্রে এবং আধ্যাত্নিক উন্নতি বিষয়ে দীক্ষা দিতেন। তাঁরা ছাত্রদের ধর্মীয় শিক্ষার সাথে চিকিৎসা শাস্ত্রেও জ্ঞানদান করতেন।
পাঠান আমলে শিক্ষা ব্যবস্থার কোন আমুল পরিবর্তন ঘটেনি। মোগল আমলে এদেশের মুসলিমগণ শিক্ষা-দীক্ষায় মোটামুটি উন্নত ছিল। তৎকালে মুসলমানদের শিক্ষা m¤^‡Ü উইলিয়াম এ্যাডাম (ডরষষরস অফধস) মন্তব্য করেন যে, এ দেশে মুসলিমগন বহু বেসরকারী বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁরা শিক্ষাকে পেশা ও জীবিকা নির্বাহের উপায় বলে গ্রহন করেননি। তাঁরা একে ন্যায় ও পূণ্যের কাজ বলে মনে করতেন। সে আমলে প্রথম পর্যায়ের শিক্ষা বাংলা ভাষার এবং উচ্চ শিক্ষা আরবী ও ফারসী ভাষার দেয়া হত। কিন্তু বহিরাগত মুসলিমগণ, বিশেষ করে পশ্চিম ও উত্তর ভারতীয় মুসলিমগণ ফারসী ও উর্দুভাষা ব্যবহার করতেন। মুসলমান সমাজের অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে মেয়েরা মসজিদে কুরআন শিক্ষার সাথে এক বা একাধিক বিষয় যেমন বাংলা, গনিত, আরবী, ফারসী ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানলাভ করত। বিত্তশালী লোকেরা নিজকর জমি, ওয়াকফ ও লাখেরাজ সম্পত্তি দান করে এ শিক্ষা ব্যবস্থা উৎসাহ দিতেন।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজ বনিকদের হাতে এদেশের শাসনভার চলে যায়। শাসনভার গ্রহণে করার পর ইংরেজ সরকার বহুদিন পর্যন্ত এদেশের অধিবাসীদের জ্ঞান বিজ্ঞান শেখানোর জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। খ্রিস্টান মিশনারীরা ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রথমে নিজেরা বাংলা শেখেন এবং বাঙ্গালীদের ইংরেজী শেখানোর ব্যাপারে আগ্রহি হন। বিভিন্ন মিশরীয় সোসাইটি দেশের নানাস্থানে স্কুল স্থাপন করেন। এসব স্কুলে বাংলা এবং ইংরেজীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানদান করা হত। ইংরেজ ও বাঙ্গালী ধনী লোকেরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থদান করতেন।
মিশনারী ম্যাকসমুলার কর্তৃক ১৭৫৭খ্রিস্টাব্দের জরিপ থেকে এদেশের তৎকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার একটা আভাস পাওয়া যায়।১ এখানে তখন যথেষ্ট সংখ্যক স্থানীয় বিদ্যালয় ছিল। মুসলিমদের জন্য ছিল মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তব ও মাদ্রাসা, আর হিন্দুদের জন্য ছিল মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তব ও মাদ্রাসা, আর হিন্দুদের জন্য ছিল মন্দির কেন্দ্রিক টোল ও পাঠশালা। আর ছিল পারিবারিক স্কুল। মক্তবের ওস্তাদ ও টোলের গুরুমশায়রা প্রাথমিক ভাষা, অঙ্ক, ব্যাকরণ, দলিলপত্র লিখন সংক্রান্ত হস্তলিখিত নিজস্ব বইপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদান করতেন। শিক্ষকগন নিজেরাই পাঠ্যপুস্তক তৈরী করতেন এবং শিক্ষা সমাপ্তির পর তাঁরাই ছাত্রদের উপাধি দান করতেন। পড় শেখানোর বিনিময়ে শিক্ষকগন ছাত্রদের নিকট থেকে গুরুদক্ষিনা লাভ করতেন। সরকার ও বিত্তশালী লোকেরা সে সব প্রতিষ্ঠানে অর্থদান করতেন। পারিবারিক বিদ্যালয়ে উচ্চ শ্রেণীর মুলমানগন তাঁদের নিজেদের এবং প্রতিবেশীর ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিতেন। এখানে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থাও ছিল২।
ইংরেজদের হাতে এদেশের প্রশাসনিক ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর মুসলমানদের অবস্থা সকল দিক থেকে দ্রুতগতিতে খারাপ হতে থাকে। ১৭৯৩খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুসলমান জমিদারেরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তবুও ওয়াকফ লাখেরাজ সম্পত্তির সহায়তায় মুসলিমদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ কিছু কাল টিকে ছিল। কালক্রমে সে সব সম্পত্তি হস্তচ্যুত হয়ে পড়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অবলুপ্ত হতে থাকে।
১৮৩৫-৩৮খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উইলিয়াম এড্যাম সরকরের কাছে তিনটি রিপোট পেশ করেন। তাতে দেখা যায়, এ দেশে মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৮৫৪খ্রিস্টাব্দে মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তবে সরকারী সাহায্য বদ্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মুসলমানদের ঐতিহ্য বাহী শিক্ষার ব্যাহত হয়১।
অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থা:- যশোর জেলার অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার অগ্রগতি আলোচনা প্রসঙ্গে যশোর জেলা গেজেটিয়ারে (১৯১২) ও ম্যালি (ঙ্থগধষষবু) উল্লেখ করেছেন যে সমগ্র জেলায় ১৮৯০-৯১সনে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১,০৬৩ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৩০,৩৭৯জন।
১৯০০-০১সনে বিদ্যালয়ের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৯৭৯টিতে দাঁড়ায় কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪,৮৭৮ জন হয়। পরবর্তী দশকে ১৯১০-১১সনে বিদ্যালয়ের সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধিপেয়ে ১, ৪৫০টি হয় এবং আলোচ্য সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিশেষ ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩,০৭০জন হয়।
১৯০০-০১সনে ও’ম্যালীর গেজেটিয়ারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিদ্যালয়ে যাওয়ার মত বয়ঃপ্রাপ্ত বালকদের মধ্যে শতকরা ৩০.৩৬জন এবং বালিকাদের মধ্যে শতকরা ৪.২জন অধ্যয়নরত ছিল। প্রতি ৩.৩টি গ্রামের মধ্যে ১টি করে বিদ্যালয় ছিল। সমগ্র জেলার বিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন ডিপুটি ইন্সপেক্টর এবং তাকে সহায়তা করার জন্য ১জন অতিরিক্ত ডিপুটি ইন্সপেক্টর, ৯জন সাব-ইন্সপেক্টর, ৯জন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর ও ৭জন ইন্সপেক্টিং পন্ডিত ছিলেন। উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখিত সময়ে ও সমগ্র জেলার ১টি মাত্র কলেজ নড়াইল মহকুমায় অবস্থিত ছিল-নাম ভিক্টোরিয়া কলেজ। কলেজটি নড়াইলের বাবু রামরতন রায় কর্তৃক মূলতঃ একটি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৬সনে উক্ত-বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীসমূহ প্রবর্তন করার ফলে বিদ্যালয়টি একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে রূপান্তরিত হয়। এভাবে চার বছর চলার পর ১৮৯০সনে স্নাতক শ্রেণীর বিষয় সমূহ পড়ানো হলে প্রথম শ্রেণীর কলেজে উন্নীত হয়। আলোচ্য শতাব্দীর সমাপ্তি পর্যন্ত কলেজটির উক্ত মান অক্ষুন্ন থাকে। অতঃপর স্নাতক শ্রেণীসমূহ বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীসমূহ পূর্বের ন্যায় চালু থাকে। কলেজের শিক্ষক মন্ডলীতে ছিলেন ১জন অধ্যক্ষ, ১জন ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক, ১জন অঙ্ক শাস্ত্রের অধ্যাপক ও ২জন সংকৃতের অধ্যাপক। কলেজ সংলগ্ন ১টি ছাত্রাবাস ও ১টি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় ছিল। কলেজের অধ্যক্ষ এ দুটির তত্ত্বাবধায়ন করতেন।