
Home শিল্পী / Artist > নরেশ মিত্র / Naresh Mitra (1888-1968)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 16526 বার পড়া হয়েছে
নরেশ মিত্র / Naresh Mitra (1888-1968)
নরেশ মিত্র
Naresh Mitra
Home District: Jessore

নরেশ মিত্রের বাড়ি যশোর জেলায়, জন্ম আগরতলায় ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মে। ছাত্রাবস্থায় নাট্যাভিনয়ের সঙ্গে জড়িত হন। তিনি অভিনয় করেন ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ (শাইলক চরিত্রে), ‘ওথেলো’ (ইয়াগো চরিত্রে), ‘কুরুক্ষেত্র’ (দুর্বাশা) প্রভৃতি নাটকে। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্নাতক হন, ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে পাশ করেন আইন। পেশা হিসেবে কি বেছে নেবেন ওকালতি, পাটের ব্যবসা না অভিনয় সে ব্যাপারে ছিলেন অনিশ্চিত। তাই কিছুদিন ওকালতি, কিছুদিন পাটের দালালি ব্যবসা করে শেষ পর্যন্ত ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে পেশাদারি রঙ্গমঞ্চেই জড়িত হন কলকা তা মিনার্ভা থিয়েটারে। প্রথম পেশাদিারি অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেন ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকের চাণক্য চরিত্রে। পরে তিনি একে একে ‘কর্ণার্জুন’, ‘কেদার রায়’, ‘চাণক্য’, ‘শাজাহান’, ‘পালারামের "স্বদেশিকতা" প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন।
নরেশ মিত্র যখন নাট্যাভিনয় নিয়ে ব্যস্ত তখন কলকাতায় ম্যাডান থিয়েটাস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বায়োস্কোপ বা ছবি নির্মাণ শুরু করেছে। তিনিও চিত্র জগতের প্রতি ঝুঁকে পড়েন এ সময়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি যোগ দেন তাজমহল ফিল্ম কোম্পানিতে। এই কোম্পানি গঠনে তিনিও অন্তরাল থেকে নেতৃত্ব দেন। তাজমহল ফিল্ম কোম্পানি শরৎচন্দ্রের ‘আঁধারে আলো’ উপন্যাসের চিত্ররূপ দেয়ার উদ্যোগ নেয়। ছবির পরিচালক নিযুক্ত হন শিশির কুমার ভাদুড়ী, তাঁর সহকর্মী হন নরেশচন্দ্র মিত্র। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শিশির ভাদুড়ী, নরেশ মিত্র, দুর্গারাণী, যোগেশ চৌধুরী, দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ। ‘আঁধারে আলো’র নির্মাণ পর্বে শিশির ভাদুড়ী এক দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়লে বাকি অংশের কাজ নরেশ মিত্র সম্পন্ন করেন। এ কারণে ছবির মুক্তিলগ্নে পরিচালক হিসেবে দু’জনেরই নাম পর্দায় দেখানো হয়। ‘আঁধারে আলো’ ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়।
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে নরেশ মিত্র পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে আলোচিত হন নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মানভঞ্জন’ এর কারণে। তাজমহল ফিল্ম কোম্পানির প্রযোজনায় ‘মানভঞ্জন’ হচ্ছে রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রথম চলচ্চিত্র রূপ। ‘মানভঞ্জন’ মুক্তি পায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পরিচালনায় মুক্তি পায় আরেকটি শরৎ কাহিনীর চিত্ররূপ ‘চন্দ্রনাথ’। নরেশ মিত্র ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তৈরী করেন শরৎচন্দ্রের সাড়া জাগানো কাহিনী নিয়ে ছবি ‘দেবদাস’, ‘নির্বাক’ (নির্বাক)। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সবাক যুগে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ উপন্যাসের চিত্ররূপ দেন। এ ছবির সঙ্গীত পরিচালনা কাজী নজরুল ইসলাম।
পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত নরেশ মিত্র সক্রিয় ছিলেন চলচ্চিত্রে। পরে তিনি মৃত্যুর পর পর্যন্ত যাত্রা ও রঙ্গমঞ্চের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ২০ সেপ্টেম্বর ‘নট শেখর’ নির্বাক ও সবাক যুগের বাংলার চলচ্চিত্রে অন্যতম স্থপতি নরেশ মিত্র মারা যান।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নরেশ মিত্রের অবদান পরিচালক, অভিনেতা, সংগঠক, প্রশিক্ষক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ধর্ম ও পুরাণভিত্তিক কল্পকাহিনীর বদলে চলচ্চিত্রে তিনি এনেছিলেন সমকালীন সমাজ-সাহিত্যনির্ভর কাহিনী। এই অর্থে তিনি ছিলেন তাঁর কালের আধুনিক চলচ্চিত্রকার।
নরেশ মিত্রের চলচ্চিত্রের কর্মের মধ্যে রয়েছে:
১৯২২-‘আঁধারে আলো’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ১৯২৩-‘মানভঞ্জন’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ১৯২৪-‘চন্দ্রনাথ’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ১৯২৮-‘দেবদাস’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ‘সরলা’ (অভিনয়), ১৯২৯-‘কপাল কুণ্ডলা’ (অভিনয়), ১৯৩০-‘গিরিবালা’ (অভিনয়), ‘কাল পরিণয়’ (অভিনয়), ১৯৩১-‘দেবী চৌধুরাণী’ (অভিনয়), ১৯৩২-‘নৌকাডুবি’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ১৯৩৩-‘সাবিত্রী’ (পরিচালনা), ১৯৩৫-‘প্রফুল্ল’ (অভিনয়), ১৯৩৬-‘পথের শেষে’ (অভিনয়), ‘মহানিশা’ (পরিচালনা), ১৯৩৭-‘ছিন্নহার’ (অভিনয়), ১৯৩৮-‘গোরা’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ‘বেকার নাশন’ (অভিনয়), ১৯৩৯-‘শর্মিষ্ঠা’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ‘চাণক্য’ (অভিনয়), ১৯৪১-‘কবি জয়দেব’ (অভিনয়), ‘প্রতিশোধ’ (অভিনয়), ১৯৪২-‘মীনাক্ষী’ (অভিনয়), ‘অশোক’ (অভিনয়), ‘পতিব্রতা’ (অভিনয়), ‘বন্দী’ (অভিনয়), ‘শহর থেকে দূরে’ (অভিনয়), ১৯৪৪-‘সমাজ’ (অভিনয়), ১৯৪৫-‘বন্দিতা’ (অভিনয়), ‘দুই পুরুষ’ (অভিনয়), ১৯৪৬-‘পথের সাথী’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ‘নিবেদিতা’ (অভিনয়), ১৯৪৭-‘রায় চৌধুরী’ (অভিনয়), স্বপ্ন ও সাধনা’ (নাটক পরিচালনা ও অভিনয়), 'স্বয়ংসিদ্ধা' (পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও অভিনয়), ১৯৪৮-‘মাটি ও মানুষ’ (অভিনয়), ‘অনির্বাণ’ (অভিনয়), ১৯৪৯-১ বিদূষী ভার্যা’ (পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও অভিনয়), ১৯৫০-‘কঙ্কাল’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ১৯৫১-‘নিয়তি’ (পরিচালনা, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও অভিনয়), ‘পণ্ডিত মশাই’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ১৯৫২-‘নতুন পাঠশালা’ (অভিনয়), ‘বিন্দুর ছেলে’ (চিত্রনাট্য), ১৯৫৩-‘বৌঠাকুরাণীর হাট’ (পরিচালনা ও অভিনয়), ১৯৪৫-‘অন্নপূর্ণার মন্দির’ (প্রযোজনা, পরিচালনা ও অভিনয়)।
সংগ্রহ:
হাবিব ইবনে মোস্তফা