
Home ঐতিহ্য (Tradition) > মধুসূদনের পাঠশালা
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87093 বার পড়া হয়েছে
মধুসূদনের পাঠশালা
কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে সাতক্ষীরার দিকে এক কিলোমিটার এগোনোর পরই রাস্তার ডান হাতে সাদা মার্বেল পাথরের তৈরি অনেক বড় মধু তোরণ। মধু তোরণ ডিঙিয়ে মধু সড়ক পাড়ি দিয়ে আরো ১০ কিলোমিটার এগোলে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত সাগরদাঁড়ি গ্রাম।
এ গ্রামের জমিদার দত্ত বাড়িতে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সাগরদাঁড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ঐতিহাসিক কপোতাক্ষ নদ। কিন্তু সাগরদাঁড়ি গ্রামে কোনো পাঠশালা ছিল না। মা জাহ্নবী দেবীর কাছে মধুসূদন প্রাথমিক পাঠ নিয়েছেন। জাহ্নবী দেবী কবিকে শিশু বয়সেই চণ্ডী, রামায়ণ, মহাভারত, কবিকঙ্কণ, অন্নদা মঙ্গল পড়ে শুনিয়েছেন। মধুসূদন মায়ের কাছে শুনে শুনেই এসব মুখস্থ করে বর্ণনা করেছেন। মধুসূদনের জীবনীকার গোলাম মুরশিদ তাঁর 'আশার ছলনে ভুলি' গ্রন্থে লিখেছেন কলকাতায় আসার আগ পর্যন্ত মধুসূদন গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া শিখেছিলেন। গ্রামে কোনো পাঠশালা না থাকায় কবিকে ৮-৯ বছর বয়সে মাইলখানেক দূরে ফরাসি শিখতে পাঠানো হয়। পাঠশালায় তিনি ফরাসি শিক্ষার পাশাপাশি গজলও শিখেছিলেন। পরবর্তীকালে কলকাতার হিন্দু কলেজে পড়ার সময় কবি তাঁর বন্ধুদের গজল গেয়ে শোনাতেন। তবে ওই গ্রন্থে মধুসূদনের শিক্ষকের কোনো নাম নেই। মধুসূদন গবেষক কবি খসরু পারভেজ সম্পাদিত 'মধুধ্বনি' সংকলনে উল্লেখ করা হয়েছে, মধুসূদন ১৮৩০ সালে শেখপুরা গ্রামের জনৈক মৌলভী সাহেবের কাছে বাংলা ও ফরাসি শিখেছেন। সাগরদাঁড়ির প্রবীণ ব্যক্তিদের ভাষ্য হচ্ছে, শেখপুরা গ্রামের জামে মসজিদ পাঠশালাটিই হচ্ছে কবির প্রথম লেখাপড়ার হাতেখড়ির স্থান। এই মসজিদের ইমাম মৌলভী লুৎফুল হক কবির প্রথম শিক্ষাগুরু। তিনি কবিকে বাংলা ও ফরাসি শিখিয়েছেন। সে সময় মক্তবভিত্তিক যে পাঠশালা ছিল, জামে মসজিদটি তার অন্যতম। সাগরদাঁড়ি গ্রামের পাশেই শেখপুরা গ্রাম। রাস্তার পাশেই কবির প্রথম পাঠশালা সেই লাল রঙের মসজিদটি আজও স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি ঐতিহাসিক। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে মৌলভী সৈয়দ বিরাজতুল্লাহ এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আরব থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য এসে শেখপুরা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি মারা যান। পরবর্তীকালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মসজিদের সামনে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ২০০০ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি তাদের দখলে নিয়ে চার লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করেছে। ইট-সুরকির গাঁথুনির এই মসজিদে স্থানীয় মুসলি্লরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। ধর্মীয় দিক দিয়ে মসজিদটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মধুসূদনের প্রথম পাঠশালা হিসেবে এই মসজিদটি ঐতিহাসিক।
লেখক: ফখরে আলম