
Home অর্থনীতি ও বাণিজ্য (Economy and Trade) > নড়াইলে মধুমতি নদীতে সেতু হলে বদলে যাবে খুলনা বিভাগের চালচিত্র
এই পৃষ্ঠাটি মোট 18621 বার পড়া হয়েছে
নড়াইলে মধুমতি নদীতে সেতু হলে বদলে যাবে খুলনা বিভাগের চালচিত্র

বহুকাল আগে থেকেই এভাবে মানুষ পারাপার হচ্ছে মধুমতি নদী। কিন্তু নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাট পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলে বদলে যাবে খুলনা বিভাগের চালচিত্র। জ্বালানি খরচসহ যাতায়াত ব্যবস্থা অধিকতর সহজ হবে। ঢাকার সাথে দূরত্ব কমবে প্রায় ২০০ কিলোমিটার। রাজধানীর সাথে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর কৃষি পরিবহন ও বিপনণ সহজ হবে।
চাঙ্গা হবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। কৃষি পণ্য ধান, চাল, পাট, পান, নারকেল, বাঁশ, শাক-সবজি, তরিতরকারিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য হাটে-বাজারে বেচাকেনাসহ পণ্য পরিবহনে সুফল পাবে খুলনা বিভাগ ও আশেপাশের অন্তত ২০টি জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বাসসহ যাত্রী পরিবহনেও সুবিধা হবে। তাই দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাট পয়েন্টে সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতেও তা করা হচ্ছে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এ নিয়ে মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, মধুমতির কালনাঘাট পয়েন্টে সেতু নির্মিত হলে নড়াইল থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ২শ’ কিলোমিটার কমে যাবে। নড়াইল শহর ফেরিঘাট মোড় থেকে ঢাকার দূরত্ব হবে ১শ’২৭ কিলোমিটার। যশোরের দূরত্ব হবে ১শ’৬১, বেনাপোল বন্দরের ২শ’১ ও খুলনার ২শ’৩ কিলোমিটার। এতে করে খুলনা, মংলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, বেনাপোল, শিল্পনগরী নোয়াপাড়াসহ খুলনা বিভাগের চালচিত্র বদলে যাবে। বর্তমানে ঢাকার সাথে নড়াইলের ৩শ’ ২০ এবং যশোরের ২শ’ ৯০ কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে। নড়াইলের লোহাগড়ার বিনোদন কেন্দ্র ‘নিরিবিলি’ ও ‘স্বপ্নবীথি’র স্বত্তাধিকারী মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী সৈয়দ মফিজুর রহমান বলেন, এলাকায় প্রচুর প্রত্মতাত্তিক নিদর্শনসহ গুণীজন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান, চারণকবি কবিয়াল বিজয় সরকার, জারীশিল্পী মোসলেম উদ্দিন, সুরকার, গীতিকার ও গায়ক কমল সরকার, নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর, সেতারবাদক রবি শংকর, ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্ত, ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ জমিদারদের স্মৃতিধন্য নড়াইল। অথচ কোন উন্নয়ন নেই। বরাবরই আমরা অবহেলিত।
এখানে আমরা যারা উদ্যোক্তা আছি, তারা ভালো কিছু করার চাইলেও প্রতিপক্ষ হলো আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কালনাঘাট পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন বদলে যাবে, কৃষি ক্ষেত্রেও উন্নতি হবে। অনেক শিল্প কল-কারখানা গড়ে ওঠবে। ঢাকার উপর চাপ কমবে। নড়াইল ফেরিঘাট এলাকার (সীমাখালি অংশ) বালু ও তেল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন (৩৭) বলেন, নড়াইলের চিত্রা সেতু নির্মাণ ও সেতুতে টোল আদায় বন্ধের পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ভালো হচ্ছে। ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। তবে এখন লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাট পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর ব্রিজ করলে রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে।
এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও প্রসার হতো। নড়াইল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ সুলতান মাহমুদ বলেন, কালনাঘাট এলাকায় সেতু নির্মিত হলে নড়াইল থেকে ঢাকা যেতে সাধারণ ভাবে আড়াই কি তিন ঘন্টা সময় লাগত। জ্বালানী তেল সাশ্রয় হতো। নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহা বলেন, কালনাঘাট এলাকায় মধুমতি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়টি এশিয়ান হাইওয়ের মধ্যে রয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে এ রুটে বাস্তবায়ন না হলে আলাদাভাবে সেতু নির্মাণ হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আপতত সম্ভব নয়। নড়াইল-১ আসনের এমপি মোঃ কবিরুল হক মুক্তি বলেন, যেহেতু পদ্মা নদীতে মাওয়া পয়েন্টে সেতু হচ্ছে। ওই সেতুর সর্বোচ্চ ব্যবহার পেতে হলে অবশ্যই মধুমতি নদীতে কালনা পয়েন্টে ব্রিজ করতে হবে। এশিয়ান হাইওয়েতে এই সড়ক যুক্ত হলে মধুমতি নদীতে অবশ্যই সেতু হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খুব দ্রুতই এখানে সেতু নির্মান হবে। লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ হান্নান রুনু বলেন, আমাদের দাবি মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে সেতু নির্মান হোক। সেতু নির্মান হলে নড়াইলের যোগাযোগ ব্যবস্থার পুরো চিত্র বদলে যাবে। বেনাপোলের বিশিষ্ট সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, বেনাপোল থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক যায় ঢাকা, চট্রগ্রাম। কিন্তু দৌলতদিয়া হয়ে যেতে সময় লাগে বেশি। মধুমতি নদীর কালনা ঘাটে ব্রিজ হলে বেনাপোলের সাথে ঢাকার দুরত্ব হবে মাত্র ২শ’ কিলোমিটার।
উল্লেখ্য, এশিয়ান হাইওয়েসহ মধুমতি নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে নড়াইলবাসী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছেন। কিন্তু এ বিষয়ে সবাই সরকারের আন্তরিকতাকে দায়ী করছেন।
এলাকাবাসীর এ দাবি এবং বাস্তবতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করলে নড়াইল থেকে ঢাকার দূরত্ব ২শ’ কিলোমিটার কমে যাবে। খুলনা, বাগেরহাট, মংলা, সাতক্ষীরা, যশোর, বেনাপোল, শিল্পনগরী নোয়াপাড়াসহ খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জেলা এবং গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও বরিশালের মধ্যে অনেকখানি দূরত্ব কমে যাবে। এতে করে সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি কাঁচামালসহ কৃষি পণ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র পরিবহনে এবং আমদানি-রফতানি সহজ হবে।