
Home নড়াইল জেলা / Narail District > নড়াইল জেলা পরিচিতি / Introduction of Narail District
এই পৃষ্ঠাটি মোট 89689 বার পড়া হয়েছে
নড়াইল জেলা পরিচিতি / Introduction of Narail District
নড়াইল জেলার নামকরণ :
ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে আনুমানিক ১০ লক্ষ বৎসর পূর্বে গঙ্গা নদী প্রবাহিত পলিমাটি দ্বারা গাঙ্গেয় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়। সমগ্র বঙ্গে নড়াইল জেলা ও দক্ষিণ বঙ্গের

ভৌগোলিক অবস্থান :
৯৯০.২৩ বর্গ কি: মি: আয়তন বিশিষ্ট নড়াইল জেলা উত্তরে মাগুরা জেলা, দক্ষিণে খুলনা জেলা, পূর্বে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে যশোর জেলা দ্বারা বেষ্টিত। ভৌগোলিক অবস্থানে নড়াইল জেলা ৮৯.৩১ দ্রাঘিমাংশে এবং ২৩.১১ অক্ষাংশে অবস্থিত।
জলবায়ু ও বৃষ্টিপাত :
বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৭.১০ সে: এবং সর্বনিম্ন ১১.২০ সে:। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৪৬৭ মি: মি:।
ভূ-প্রকৃতি :
ভূ-প্রকৃতি অনুসারে নড়াইল জেলাকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। ১) উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত উচ্চ ভূমি। ২) নদীর উপকূলবর্তী সমভূমি। ৩) বিল অঞ্চলের নিম্নভূমি। ৪) মধ্যভাগের সমভূমি।
নদ-নদী ও বিল-বাওড় :
নড়াইলের প্রধান নদী ৪টি। মধুমতি, নবগংগা, ভৈরব, চিত্রা এবং কাজলা।
রয়েছে প্রচুর বিল ও বাওড়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চাচুরি বিল।
শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা :
নড়াইল শহর চিত্রানদীর তীরে অবস্থিত। ৯টি ওয়ার্ড ও ২৪টি মহল্লা নিয়ে গঠিত এই শহর। শহরের আয়তন ২৮.৮৯ বর্গ কি: মি:।
শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৫১.৩৪% ও নারী ৪৮.৬৬%। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১৪০০ জন। শহরের অধিবাসীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৫১.৭%। শহরে ১টি রেস্ট হাউজ ও ১টি ডাকবাংলো আছে।
প্রশাসন :
১৮৫০ সালের কয়েক বছর পূর্বে নড়াইল যশোর জেলার একটি থানা এবং ১৮৬১ সালে যশোর জেলার একটি মহাকুমা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর দীর্ঘ ১২৩ বৎসর পর ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ এটি যশোর জেলা হতে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা, ১৮টি ওয়ার্ড, ৪৩টি মহল্লা, ৩৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৪৫টি মৌজা এবং ৬৪৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত নড়াইল জেলা। উপজেলাগুলো হচ্ছে নড়াইল সদর, কালিয়া এবং লোহাগড়া। পৌরসভাগুলো নড়াইল সদর এবং কালিয়া। নতুন একটি পুলিশি থানা হলো নড়াগাতি (২০০০ সালের জানুয়ারীতে শুরু হয়েছে)।
নড়াইলে জাতীয় সংসদে সংসদীয় আসন ২টি। কালিয়া উপজেলা ও নড়াইল উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-১ এবং লোহাগড়া ও নড়াইল পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসন।
পুলিশ ফাঁড়ি মোট ৫টি যথাক্রমে - নলদী, পেড়লী, মির্জাপুর, শেখহাটি, বিছাইল। পুলিশ ক্যাম্প ১টি কোমখালী। নৌ ফাঁড়ি ১টি বড়দিয়া।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ :
নড়াইল জেলায় রয়েছে প্রায় দুইশত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, তাঁদের মধ্যে বিশেষ খ্যাতি সম্পন্ন ৭ জনের নাম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যেমন- সৈয়দ নওশের আলী (ফজলুল হকের মন্ত্রী সভার একজন মন্ত্রী ছিলেন), এস এম সুলতান (বিশ্ব বরেণ্য চিত্র শিল্পী), উদয় শঙ্কর (ভূবনখ্যাত শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী), পন্ডিত রবিশঙ্কর (আন্তর্জার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন সেতার শিল্পী), চারণ কবি মোসলেমউদ্দিন, কবিয়াল বিজয় সরকার, ডা: নিহার রঞ্জন গুপ্ত (প্রায় ৫০টি উপন্যাসের লেখক), নূর জালাল (তেভাগা আন্দোলনের মধ্যমনি), কমলদাশগুপ্ত (নজরুল সঙ্গীততের নির্ধারিত সুরকার), অমলকৃষ্ণ সোম (প্রখ্যাত মঞ্চাভিনেতা ১০০টির মতো মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন), বীরশ্রেষ্ঠ নূর মুহাম্মদ (১৯৭১ এর সম্মুখসমরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা), মাশরাফি বিন মর্তুজা (ক্রিকেট খেলোয়ার)।
স্থাপত্য ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন :
গোয়াল বাথান গ্রামের মসজিদ (১৬৫৪), কদমতলা মসজিদ, নালদীতে গাজীর দরগা, উজিরপুরে রাজা কেশব রায়ের বাড়ী, জোড় বাংলায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত রাধাগোবিন্দ মন্দির। লক্ষ্মীপাশায় কালিবাড়ী, নিহিনাথতলার বড়দিয়াতে মঠ।
ঐতিহাসিক ঘটনা :
১৮৫৯.৬০ সালে এই জেলায় নীল বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে তেভাগা আন্দোলন হয়। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নড়াইল জেলা শত্রু মুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন :
নড়াইলে মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন হিসেবে রয়েছে ২টি গণকরব।
জনসংখ্যা :
নড়াইলের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ। এর মধ্যে পুরুষ ৫৪.২২%, মহিলা ৪৫.৭৮%, মুসলিম ৭৫.৫৬%, হিন্দু ২৪.৩১% এবং অন্যান্য ০.১৩%।
একটি খৃষ্টান সাহেব পরিবার এখানে বসবাস করে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান :
মসজিদ ১১৫৬টি, মন্দির ২৪৪টি এবং গির্জা ১টি।
সাক্ষরতা :
নড়াইলে গড় সাক্ষরতা ৩৫.৬৫%। এর মধ্যে পুরুষ ৪২.২৩% এবং মহিলা ২৮.৯৯%।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
কলেজ ১৭টি, কারিগরি কলেজ ১টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৯৪টি, জুনিয়র হাইস্কুল ২২টি, মাদ্রাসা ৮৫টি, মক্তব ১৬০টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৮৭টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭১টি, আর্ট স্কুল ১টি, বৃত্তিমূলক স্কুল ১টি, কারিগরি স্কুল ৩টি, অন্ধদের স্কুল ১টি, কিন্ডার গার্ডেন ২টি, কমিউনিটি স্কুল ৬টি এবং স্যাটেলাইট স্কুল ১৯টি।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল (১৮৫৬), নড়াইল সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজ (১৮৮৬), কালিয়া পাইলট হাইস্কুল (১৮৬৫), বারাইপাড়া প্রাইমারী স্কুল (১৮৫০), বাবরা প্রাইমারী স্কুল (১৮৯৫), ইতনা হাইস্কুল (১৯০০), সিংঙ্গিয়া হাটবালপুর হাইস্কুল (১৯২১)। বাশগ্রাম বিষ্ণুপুর হাইস্কুল (১৯৩২), লোহাগড়া পাইলট স্কুল।
স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত সংবাদপত্র ও সাময়িকী :
দৈনিক মহাসাগর, সাপ্তাহিক নড়াইল বার্তা, মাসিক প্রান্তিক (বিলুপ্ত), পাক্ষিক কিরণ, কল্যাণী এবং বারুজিবী।
সাংস্কৃতিক সংগঠন :
গণগ্রন্থাগার ৬টি, ক্লাব ১৬০টি, সিনেমা হল ৪টি, মহিলা সংগঠন ১০৪টি, থিয়েটার গ্রুপ ৭টি, সাহিত্য সমিতি ৭টি, অপেরা দল ৭টি, থিয়েটার গ্রুপ ১২টি এবং খেলার মাঠ ৩০টি।
প্রধান পেশা :
কৃষি ৪৭.৫৫%, মৎস্য ২.৮৮%, কৃষি মজুর ১৮.০২%, মজুরী শ্রমিক ২.৪৪%, শিল্প ১.৩১%, ব্যবসা ১০.৯২% এবং চাকুরী ৭.৮৪%, পরিবহন ২.৬% এবং অন্যান্য ৭.২৪।
ব্যবহৃত ভূমি :
মোট আবাদযোগ্য জমি ৭৮৪৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে একক ফসল ৪৩.১৭%, দ্বৈত ফসল ৪৪.২৫% এবং ত্রিফসলী জমি ১২.৫৮%। সেচের আওতায় জমি ২২.১৬%।
ভূমি নিয়ন্ত্রণ :
চাষীদের মধ্যে ২৭.৫৪% ভূমিহীন, ৩৬.৮১% ক্ষুদ্র, ১৪.৭৭% মাঝারী এবং ধনী ২০.৯৭%।
প্রধান শষ্য :
ধান, পাট, গম, তেল বীজ, সরিষা, আলু, আখ, কলাই ও খেসারী। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত শষ্যের মধ্যে রয়েছে নীল, কাউন, তুলা ও বার্লি।
প্রধান ফল :
আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, জাম, নারিকেল ও সুপারী।
যোগাযোগ সুবিধা :
পাকা সড়ক ২৪৩ কি: মি:, আধাপাকা ৭৪ কি: মি:, কাচা রাস্তা ১৬১৫ কি: মি: এবং জলপথ ৬৭ নটিকাল মাইল। ঐতিহ্যগত পরিবহনের মধ্যে রয়েছে পালকি (বিলুপ্ত), ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি, গরুর গাড়ি (প্রায় বিলুপ্ত) এবং নৌকা।
কলকারখানা :
বৃহৎ ও মাঝারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে বস্ত্রকল ১টি, বিস্কুট কারখানা ৬টি, কলম শিল্প ১টি, করাত কল ৪২টি, বরফ কারখানা ১৮টি, চাল ও আটা কল ৪৫টি, হলুদ মেশিন ৬টি, ওয়েল্ডিং ৭৩টি এবং ছাপাখানা ৪টি। কুটির শিল্পের মধ্যে তাঁত, বাঁশ ও বেতের কাজ, কাঠের কাজ, স্বর্ণকার, কামার, কুম্ভকার, দরজী ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত।
হাট বাজার ও মেলা :
হাট বাজার ৮৪টি, মেলা ১৯টি।
প্রধান রপ্তানী :
পান, নারিকেল, সুপারী এবং চিংড়ি।
এনজিও তৎপরতা :
তৎপরতা চালাচ্ছে এমন গুরুত্বপূর্ণ এনজিওগুলি হচ্ছে ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, প্রশিকা, কুমিল্লা প্রশিকা, গ্রামীণ ব্যাংক, প্রসেস, পল্লী উন্নয়ন প্রচেষ্টা, উদ্দীপন, গণসাহায্য সংস্থা, জাগরণী চক্র, আই এল ডি এবং প্রত্যয়।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র :
জেলা সদর হাসপাতাল ১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২টি, প্রসূতি ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১টি, মিশন হাসপাতাল ১টি, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩৩টি, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৭টি, বেসরকারী ক্লিনিক ৬টি, দাতব্য হাসপাতাল ৪টি এবং পশু চিকিৎসা হাসপাতাল ১টি।
তথ্য সূত্র :
বাংলা পিডিয়া ওয়েবসাইট
/
নড়াইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
লেখক: মহসিন হোসাইন
প্রকাশকাল: ২০০৭
/
নড়াইল জেলা সমীক্ষা ও স্থাননাম
লেখক: মহসিন হোসাইন
প্রকাশকাল: ২০০১
/
নড়াইল জেলার অতীত বর্তমান
(আকরামুজ্জামান মিলু)
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
অনুবাদ :
কামাল নাসের, আরটিভি
সর্বশেষ আপডেট :
নভেম্বর ২০১১
More inforamtion About Narail
dcnarail.gov.bd
banglapedia.org
wikipedia.org
geonames.org
mapsof.net
bangladeshtalks.com
dcnarail.gov.bd
banglapedia.org
wikipedia.org
geonames.org
mapsof.net
bangladeshtalks.com