
Home শিল্পী / Artist > সুচন্দা / Suchanda (1947)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 18443 বার পড়া হয়েছে
সুচন্দা / Suchanda (1947)
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব
কোহিনুর আক্তার সুচন্দা
Kohinur Akter Suchanda
Home District: Jessore
কোহিনুর আক্তার সুচন্দা
Kohinur Akter Suchanda
Home District: Jessore


চলচ্চিত্র জগতের এক কিংবদন্তী, যার নাম কোহিনূর আখতার সুচন্দা। বিস্ময়কর সেই নারী সুচন্দা, যার কৈশোর থেকে প্রতিভা প্রস্ফুটিত হয়। ধীরে ধীরে তার অভিনয়ের জাদুতে এক ইন্দ্রজাল যা, বিস্মিত ও বিমুগ্ধ করে রেখেছিল সব দর্শক শ্রোতাকে। সমগ্র এশিয়ায় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনি ছিলেন, আছেন নিবেদিত প্রাণ। অভিনয় ছিল তার একমাত্র ধ্যান ও জ্ঞান। সাংস্কৃতিক জগতের প্রতি এই অখন্ড প্রেম তাঁকে নিয়েছে সাফল্যের একেবারে চূড়ায়। একের পর এক সাফল্যের জয়মুকুট চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তৈরি করেছেন এক নতুন অধ্যায় এবং তার অভিনয়ের ভঙ্গিমাকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।
একাগ্র চিত্রে অনুশীলন দিয়ে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ধরে রেখেছেন সফলতার ঘরে ঢুকার চাবিটি, সত্যিই তিনি সে ঘর খুলতে পেরেছেন ও প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
দেশপ্রেমিক, সমাজসেবী এই নারীর কৃতিত্ব কোন অশনি সংকেত নিস্প্রভ করতে পারেনি। বিনয়ী ও দেশের প্রতি ভালবাসা, লাল সবুজের পতাকাকে হৃদয়ে যাপন করে বিশ্বের দরবারে হয়েছেন বহু সম্মানে সম্মানিত।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি আজ সবার কাছে এক নতুন মানদন্ড। যেখানে তাঁর তুলনা বোধ হয় তিনি নিজেই।
পারিবারিক জীবনঃ
১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যশোরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সুচন্দার বাবা এ.এস.এম নিজাম উদ্দীন আতায়ুব সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা ডাঃ বেগম জাহান আরা ছিলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তিনি সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডের সাথেও জড়িত ছিলেন।
সুচন্দার সফলতার পিছনে মায়ের অবদান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন-
“কলকাতার বিখ্যাত লেডি ব্রাবোন কলেজ থেকে আমার মা পড়াশোনা করেছেন। তখন মুসলমান মেয়েদের লেখাপড়া করাটা খুব কঠিন ছিল। বাবা কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। বাবা-মা কলকাতায় পড়াশোনা করার সুবাদে সংস্কৃতিমনা ছিলেন। মায়ের ইচ্ছা ছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমি যেন ভালো কিছু করতে পারি, তাই তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই গড়ে তুলেছিলেন। মা চেয়েছিলেন আমি যেন অনেক কাজেই পারদর্শী হই।
তবে চলচ্চিত্রাঙ্গনে তিনি আসবেন এমনটা তিনি ভাবেননি। ছোটবেলা থেকে নাচ, গান, ছবি আঁকা থেকে শুরু করে রান্না-বান্না, সেলাই সব কিছুই তিনি শিখিয়েছেন। ছোটবেলায় রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। বাড়িতে তার জন্য নাচ ও গানের শিক্ষক ছিল। নাচের শিক্ষক খুব

ভালো বাঁশের বাঁশি বাজাতেন। সেই বাঁশির সুরে তিনি নাচতেন। তার ওই শিক্ষকের নাম ছিল মুক্তার আলী। এছাড়া তাদের পাড়ায় একটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ছিল। ওখানে তারা দল বেঁধে নাচ শিখতেন। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতেন। তিনি যেন সবকিছুতেই অংশগ্রহন করেন এবং ভালো পারফর্ম করেন এ ছিল তার মায়ের আকাঙ্খা।
মায়ের অনুপ্রেরণায় তার অল্প বিস্তার লেখালেখির অভ্যাসও ছিল। ইংরেজী বিষয় বাবার কাছ থেকে পড়েছেন। তবে বাংলা ভাষার দখলটা তৈরি হয়েছে মায়ের কাছ থেকে। মা নিজেও তখন লেখালেখি করতেন। সেগুলো তৎকালীন কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেবা সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। ওই সংগঠনের ম্যাধমে মা গরীবদের চিকিৎসা দিতেন এবং তাদের নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতাও করতেন।
তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সুচন্দা সবার বড়। ছোট দুই বোন ববিতা ও চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। বড় ভাই শহীদুল ইসলাম একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম একজন বৈমানিক এবং সবার ছোট বাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত। দাদা বাড়ী যশোরের বিজয় নগরে এবং নানা বাড়ী নড়াইলের চরবালীদিয়া গ্রামে। পৈত্রিক বাড়ী যশোর শহরে সার্কিট হাউজের সামনে (রাবেয়া মঞ্জিল)। সুচন্দা প্রথম চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর তারই পথ ধরে ববিতা ও চম্পা চলচ্চিত্রে এসেছেন। একই পরিবারের তিন বোন (তিন কন্যা) চলচ্চিত্র জগতে সমগ্র এশিয়া মহাদেশে অদ্যাবধি প্রথম।
চলচ্চিত্রে পদার্পণ করার পরই তাঁর জীবনে ঘটে যায় এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হানের সঙ্গে পরিচয় হয় বেহুলা ছবির মাধ্যমে। তারা দুইজনই ছিলেন কাজের প্রতি ডেডিগেটেড। তাই একসাথে কাজ করতে করতে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থেকে ভালোবা
মায়ের অনুপ্রেরণায় তার অল্প বিস্তার লেখালেখির অভ্যাসও ছিল। ইংরেজী বিষয় বাবার কাছ থেকে পড়েছেন। তবে বাংলা ভাষার দখলটা তৈরি হয়েছে মায়ের কাছ থেকে। মা নিজেও তখন লেখালেখি করতেন। সেগুলো তৎকালীন কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেবা সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। ওই সংগঠনের ম্যাধমে মা গরীবদের চিকিৎসা দিতেন এবং তাদের নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতাও করতেন।
তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সুচন্দা সবার বড়। ছোট দুই বোন ববিতা ও চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। বড় ভাই শহীদুল ইসলাম একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম একজন বৈমানিক এবং সবার ছোট বাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত। দাদা বাড়ী যশোরের বিজয় নগরে এবং নানা বাড়ী নড়াইলের চরবালীদিয়া গ্রামে। পৈত্রিক বাড়ী যশোর শহরে সার্কিট হাউজের সামনে (রাবেয়া মঞ্জিল)। সুচন্দা প্রথম চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর তারই পথ ধরে ববিতা ও চম্পা চলচ্চিত্রে এসেছেন। একই পরিবারের তিন বোন (তিন কন্যা) চলচ্চিত্র জগতে সমগ্র এশিয়া মহাদেশে অদ্যাবধি প্রথম।
চলচ্চিত্রে পদার্পণ করার পরই তাঁর জীবনে ঘটে যায় এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হানের সঙ্গে পরিচয় হয় বেহুলা ছবির মাধ্যমে। তারা দুইজনই ছিলেন কাজের প্রতি ডেডিগেটেড। তাই একসাথে কাজ করতে করতে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থেকে ভালোবা

সার জন্ম। আর ভালোবাসা থেকে শেষ পর্যন্ত ১৯৬৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সুচন্দা ও সন্তানদের নিয়ে স্বামী জহির রায়হান ভারতে যান। সেখানে সহযোদ্ধা হিসাবে জহির রায়হানকে সহযোগিতা করেছেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আকাঙ্খিত বিজয় এলো। দেশে ফিরলেন সুচন্দা-স্বামী জহির রায়হান ও সন্তানদের নিয়ে। তারপরই হঠাৎ একদিন এলো তাঁর জীবনের সবচেয়ে দূর্ভাগ্যের দিন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি। বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবিদের খোঁজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হলেন এদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রবাদ পুরুষ, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, জীবনমুখী সফল চলচ্চিত্রকার, বিশুদ্ধচিন্তার রাজনীতিবিদ শহিদ জহির রায়হান।
তারপর বেশ কিছুদিন তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে দূরে থাকেন। তিনি শিশু সন্তানদের এবং মাতৃহারা ছোট ভাই-বোনদের মুখের দিকে তাকিয়ে শক্ত হাতে হাল ধরে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যান।
সুচন্দার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে-মেয়েরা সকলেই বিবাহিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত।
শিক্ষাজীবন:
সুচন্দার শিক্ষার হাতে খড়ি হয় সাতক্ষীরায়। চাকরিজীবী পিতা বদলী হয়ে যশোরে চলে আসলে তাঁকে ভর্তি করা হয় যশোর মোমেন গার্লস স্কুলে (যশোর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)। মায়ের কাছে বাংলা আর বাবার কাছে ইংরেজী পড়তেন তিনি। স্কুলের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন এবং কৃত্বিতের সাক্ষর রাখতেন। এখান থেকেই তিনি ১৯..... সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হন যশোর মাইকেল মদুসূদন কলেজে। ইতোমধ্যে তিনি কিশোরী নৃত্যশিল্পী হিসাবে যশোরে খ্যাতি অর্জন করেছেন। যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর নৃত্য প্রদর্শন এক অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে তত দিনে।
বাবা চাকরির সুবাদে আবার বদলী হন বরিশাল এবং পরে ঢাকায় বসবাস করেন। সেজন্য সুচন্দাকেও বরিশাল মহিলা কলেজে কিছুদিন এবং পরে ঢাকা সিটি নাইট কলেজ (ঢাকা সিটি কলেজ) পড়াশোনা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকা সিটি কলেজ হতে এবং এখানেই স্নাতক বর্ষে ভর্তি হন। এরপরই তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন এবং সেখানে ব্যস্ততার কারণে স্নাতক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
পরিবারের সাংস্কৃতিমষ্কতা এবং নিজের নৃত্য প্রতিভায় সম্ভবতঃ তাঁর মধ্যে সহজাত অভিনয় শিল্পীকে জাগ্রত করেছিলো।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সুচন্দা ও সন্তানদের নিয়ে স্বামী জহির রায়হান ভারতে যান। সেখানে সহযোদ্ধা হিসাবে জহির রায়হানকে সহযোগিতা করেছেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আকাঙ্খিত বিজয় এলো। দেশে ফিরলেন সুচন্দা-স্বামী জহির রায়হান ও সন্তানদের নিয়ে। তারপরই হঠাৎ একদিন এলো তাঁর জীবনের সবচেয়ে দূর্ভাগ্যের দিন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি। বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবিদের খোঁজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হলেন এদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রবাদ পুরুষ, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, জীবনমুখী সফল চলচ্চিত্রকার, বিশুদ্ধচিন্তার রাজনীতিবিদ শহিদ জহির রায়হান।
তারপর বেশ কিছুদিন তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে দূরে থাকেন। তিনি শিশু সন্তানদের এবং মাতৃহারা ছোট ভাই-বোনদের মুখের দিকে তাকিয়ে শক্ত হাতে হাল ধরে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যান।
সুচন্দার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে-মেয়েরা সকলেই বিবাহিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত।
শিক্ষাজীবন:
সুচন্দার শিক্ষার হাতে খড়ি হয় সাতক্ষীরায়। চাকরিজীবী পিতা বদলী হয়ে যশোরে চলে আসলে তাঁকে ভর্তি করা হয় যশোর মোমেন গার্লস স্কুলে (যশোর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)। মায়ের কাছে বাংলা আর বাবার কাছে ইংরেজী পড়তেন তিনি। স্কুলের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন এবং কৃত্বিতের সাক্ষর রাখতেন। এখান থেকেই তিনি ১৯..... সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হন যশোর মাইকেল মদুসূদন কলেজে। ইতোমধ্যে তিনি কিশোরী নৃত্যশিল্পী হিসাবে যশোরে খ্যাতি অর্জন করেছেন। যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর নৃত্য প্রদর্শন এক অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে তত দিনে।
বাবা চাকরির সুবাদে আবার বদলী হন বরিশাল এবং পরে ঢাকায় বসবাস করেন। সেজন্য সুচন্দাকেও বরিশাল মহিলা কলেজে কিছুদিন এবং পরে ঢাকা সিটি নাইট কলেজ (ঢাকা সিটি কলেজ) পড়াশোনা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকা সিটি কলেজ হতে এবং এখানেই স্নাতক বর্ষে ভর্তি হন। এরপরই তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন এবং সেখানে ব্যস্ততার কারণে স্নাতক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
পরিবারের সাংস্কৃতিমষ্কতা এবং নিজের নৃত্য প্রতিভায় সম্ভবতঃ তাঁর মধ্যে সহজাত অভিনয় শিল্পীকে জাগ্রত করেছিলো।
চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশঃ
১৯৬৬ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে যুক্ত হয় একটি নতুন নাম ‘সুচন্দা’। বিখ্যাত পরিচালক সুভাস দত্তের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন ‘কাগজে র নৌকা’ ছবির মাধ্যমে। প্রথমেই নায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ এবং প্রথম ছবিতেই বিরাট সাফল্য।
১৯৬৬ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে যুক্ত হয় একটি নতুন নাম ‘সুচন্দা’। বিখ্যাত পরিচালক সুভাস দত্তের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন ‘কাগজে র নৌকা’ ছবির মাধ্যমে। প্রথমেই নায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ এবং প্রথম ছবিতেই বিরাট সাফল্য।

ডাগর চোখের এক সুন্দরী কিশোরী কোহিনুর আক্তার ‘সুচন্দা’ এলেন এবং জয় করলেন চিত্রজগৎ এবং অসংখ্য চিত্রামোদীদের হৃদয়। এরপর তাঁকে আর পিছনে তাঁকাতে হয়নি এক মুহুর্তের জন্যও। জহির রায়হানের পরিচালনায়
সুচন্দার দ্বিতীয় ছবি ‘বেহুলা’। এই ছবি থেকেই রাজ্জাক-সুচন্দা রোমান্টিক জুটির জন্ম। এরপর এই জুটির প্রতিটি ছবিরই সফলতা। সেই সময়ের চলচ্চিত্র দর্শকদের কেউই সম্ভবতঃ ‘আনোয়ারা’ ছবিতে সুচন্দা-রাজ্জাকের মর্মস্পর্শী অভিনয়ের কথা ভুলতে পারেননি আজও।
অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রঃ
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘কলমিলতা’, সংগ্রাম’ ও ধীরে বহে মেঘনা’। এছাড়া ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, নয়নতারা’, ‘মনের মত বউ’, ‘প্রতিশোধ’, ‘নতুন নামে ডাকো’, ‘কোথায় যেন দেখেছি’, জুলেখা, বিচার, অশ্রু দিয়ে লেখা, তিন কন্যা, চাওয়া পাওয়া, রাখাল বন্ধু, তৃষ্ণা
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘কলমিলতা’, সংগ্রাম’ ও ধীরে বহে মেঘনা’। এছাড়া ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, নয়নতারা’, ‘মনের মত বউ’, ‘প্রতিশোধ’, ‘নতুন নামে ডাকো’, ‘কোথায় যেন দেখেছি’, জুলেখা, বিচার, অশ্রু দিয়ে লেখা, তিন কন্যা, চাওয়া পাওয়া, রাখাল বন্ধু, তৃষ্ণা

পথিকৃৎ শিল্পীঃ
সুচন্দা তাঁর অভিনীত ও পরিচালিত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনা, ঘুণে ধরা সমাজ, পোড় খাওয়া মানুষ, নারী ইমপাওয়ারমেন্ট, মাটি ও মানুষের কথা তুলে ধরেছেন নিজের দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

চলচ্চিত্র প্রযোজনাঃ
প্রযোজক হিসেবে সুচন্দা সফল। স্বাধীনতার আগে ও পরে তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ব্যবসাসফল ছবি প্রযোজনা করেন ‘সুচন্দা চলচ্চিত্র’ এর ব্যানারে। স্বাধীনতার আগে দুটি ছবি প্রযোজনা করেন ‘টাকা আনা পাই’ ও ‘প্রতিশোধ’। দুটি ছবিই ব্যবসায়িক সফলতা পায়। স্বাধীনতার পর প্রযোজনা করেন তিন কন্য, বেহুলা-লাখিন্দর, বাসনা, প্রেমপ্রীতি, সবুজকোট কালো চশমা, হাজার বছর ধরে প্রভৃতি ছবি প্রযোজনা করেন।সুচন্দা প্রযোজিত ‘তিন কন্যা’ ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার অর্জন করেন। “তিন কন্যা’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে। তার প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবি “হাজার বছর ধরে” ছবিটি ব্যবসাসফলের পাশাপাশি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ বহু পুরষ্কার অর্জন করে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডঃ
* শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনীত শিল্পী, ২টি ছবির পরিচালক ও ৮ টি ছবির প্রযোজক ও পরিবেশক।
* দুঃস্থ শিশু ও নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে গঠিত ‘আলো নারী ও শিশু উন্নয়ন’ সংস্থার অন্যতম সংগঠন।
* ঢাকা লেডিস ক্লাবের সদস্য।
* বৃহত্তর যশোর সমিতি, ঢাকা এর ৬ নম্বর আজীবন সদস্য।
* বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাষ্ট্রিজের (BCI) প্রাক্তন পরিচালক।
* বেগম রোকেয়া খাতুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (শেখেরহাট, বরিশাল) এর দাতা সদস্য এবং এবি টিউটোরিয়ালের প্রাক্তন সহ-সভাপতি।
* ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে, বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার শহীদ রায়হানের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা।
* বাংলাদেশ মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য।
* ১৯৭২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমে আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন।
* সিটি নাইট কলেজ (ঢাকা সিটি কলেজ) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ঢাকা সিটি কলেজ বার্ষিকী পত্রিকার সাবেক সহ-সম্পাদিকা ছিলেন।
* বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রয়োজক, পরিচালক, পরিবেশক ও শিল্পী সমিতির আজীবন সদস্য।
* প্রযোজক সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন।
* বাংলাদেশ সিনে ফোরাম এর সহ-সভাপতি।
* চলচ্চিত্র যৌথ প্রয়োজনা কমিটির প্রাক্তন সদস্য।
* ভিডিও পাইরেসী বন্ধের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নেতৃত্বে প্রধান।
* বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চিরসবুজ রাখার উদ্দেশ্য ২৫ মার্চ, ২০১৭-কর্মসুচির মধ্য দিয়ে বঙ্গভবন ও জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ জহির রায়হানের নামে দুটি বৃক্ষ রোপন করেন।

* জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-শ্রেষ্ঠ পরিচালক (২০০৫)সহ মোট ৬টি পুরস্কার পেয়েছেন ‘হাজার বছর ধরে’ চলচ্চিত্রে।
* মাননীয় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রদত্ত রজতজয়ন্তী (২০০৭) সম্মাননা প্রাপ্তি।
* ‘প্রথম আলো’ পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ পরিচালক (২০০৫), শ্রেষ্ঠ প্রযোজক (২০০৫) সহ মোট ৬টি পুরস্কার অর্জন ‘হাজার বছর ধরে’ চলচ্চিত্রে।
* ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (২০১৪), ফিল্ম ইন ওমেন্স আইস থেকে পুরষ্কার প্রাপ্তি।
* ২০১৩ সালে Ohio State University, USA-Department of Astronomy Lifetime Achievement Award ও প্রশংসা সনদ প্রাপ্তি।
* স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থেকে প্রথম নারী প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭২ সালে রাশিয়ার তাসখন্দ আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশগ্রহণ ও জীবন থেকে নেয়া ছবির (নায়িকা চরিত্রে) ‘তাসখন্দ জার্নাল’ পুরষ্কার অর্জন।
* পাকিস্তান চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান পুরষ্কার ‘নিগার’ ও ‘সিনে জার্নাল’ পুরষ্কার অর্জন।
* ‘বেগম সুফিয়া কামাল’ পুরষ্কার অর্জন।

* শুভেচ্ছা সাংস্কৃতিক ফোরাম ও আনন্দ বিনোদন কর্তৃক প্রদত্ত ‘আজীবন সম্মাননা-২০১৫’।
* বাচসাস থেকে শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরষ্কার অর্জন।
* বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি কর্তৃক সমিতির দায়িত্ত¡ পালনে বিশেষ অবদানের জন্য পুরষ্কার প্রাপ্তি।
* দি ডেইলী ষ্টার পত্রিকা ও ষ্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড-২০১৭’।
* মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বর্ণপদক প্রাপ্তি।
* সাঁকো টেলিফিল্ম পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড।
* ফ্যান্টাসি কিডম-২০১৫ থেকে শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ ছবিসহ মোট ৬টি পুরষ্কার প্রাপ্তি।
* আনন্দ বিনোদন ষ্টার এ্যাওয়ার্ড-২০১৫।
.jpg)
* কালচক্র সাংস্কৃতিক সংস্থা কর্তৃক এদেশের চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসাবে কালচক্র স্বাধীনতা স্বর্ণপদক প্রাপ্তি।
* সিটি কল্যাণ সংস্থা, ঢাকা কর্তৃক গুণীজন স্বর্ণপদক প্রাপ্তি।ক্স বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বালিকা শতবর্ষপূর্তি ও প্রাক্তন ছাত্রী পুনর্মিলনী-২০১৭ শুভেচ্ছা স্মারক প্রাপ্তি।
* যশোর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে গুনীজন সম্মাননা প্রাপ্তি।
* ছায়ালোক গুণীজন সংবর্ধনা ২০১৯ পুরস্কার প্রাপ্তি।* বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব হইতে ইমিরিটার্স এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি।* চলচ্চিত্রে অনন্য অবদানের জন্য ঋষিজ পদক (২০১৯) প্রাপ্তি।
* ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার (চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে) ২০১৯।
.jpg)
পছন্দঃ
* ছায়ালোক গুণীজন সংবর্ধনা ২০১৯ পুরস্কার প্রাপ্তি।* বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব হইতে ইমিরিটার্স এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি।* চলচ্চিত্রে অনন্য অবদানের জন্য ঋষিজ পদক (২০১৯) প্রাপ্তি।
* ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার (চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে) ২০১৯।
.jpg)
পছন্দঃ
সুচন্দা সৌন্দর্য্যরে পুজারী। যা কিছু সুন্দর তিনি তাই পছন্দ করেন। পরচর্চা, পরনিন্দা তার অপছন্দ। আল্লাহ তায়ালার সব সৃষ্টিকে তিনি ভালবা
সেন। তিনি বলেন “আমি কারো প্রতিদ্বন্দী, কেউ আমার প্রতিদ্বন্দী এমনটি আমি ভাবিনা। আমার নিজস্বতায় আমি। যাদের কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের কেউ আমার পছন্দ নয়। যাদের মধ্যে সহনশীলতা ও ধৈর্য্যশক্তি আছে তাদের আমার খুব ভাল লাগে। তিনি অবসর পেলে টিভিতে National Geographic এবং Discovery Channel দেখেন। তিনি পুরোদস্তুর বাঙ্গাল। ভাত, ভর্তা ঝাল জাতীয় খাবার, টক জাতীয় খাবার তার খুব পছন্দ। তিনি পানতা ভাত খুব পছন্দ করেন। মাছের মধ্যে ইলিশ, কৈ, চিংড়ি তাঁর পছন্দ। ফুলের বাগান করা, রান্নাবান্না

করা তাঁর শখ। এছাড়া মাছ ধরা, গ্রামে এবং দেশ-বিদেশে ঘুরতেও তাঁর ভীষন ভাল লাগে।
“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো”-নীতিতে বিশ্বাসী। এটাই আমার জীবনের মূলমন্ত্র।
শেষাংশঃ
আমরা জানি, সৃষ্টিশীল অনুসন্ধিৎসু প্রতিটি মানুষ চিরদিন তাঁর যাপিত জীবনের কল্পনা ও অব্যক্ত সুখ বা বেদনার কথা বা দেশপ্রেমে নিজেকে আত্মস্বর্গ করার প্রকাশে ব্যাকুল থাকে এবং বৈচিত্র্যময় স্বপ্নের হাতছানিতে যে বারংবার ফিরে আসে সম্ভবনার কাছে এর ব্যতিক্রম নয় আমরা যাকে সুচন্দা রূপে চিনি এবং জানি।
শেষাংশঃ
আমরা জানি, সৃষ্টিশীল অনুসন্ধিৎসু প্রতিটি মানুষ চিরদিন তাঁর যাপিত জীবনের কল্পনা ও অব্যক্ত সুখ বা বেদনার কথা বা দেশপ্রেমে নিজেকে আত্মস্বর্গ করার প্রকাশে ব্যাকুল থাকে এবং বৈচিত্র্যময় স্বপ্নের হাতছানিতে যে বারংবার ফিরে আসে সম্ভবনার কাছে এর ব্যতিক্রম নয় আমরা যাকে সুচন্দা রূপে চিনি এবং জানি।
সংস্কৃতি চর্চা যে মেধা ও মননের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে আদর্শ সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে প্রগতিশী

ল প্রজন্ম নির্মাণে অনুপ্রেরণাশীল হয় তা আমরা সুস্পষ্ট পেয়েছি সুচন্দার মাঝে।
প্রাণোচ্ছল এই শিল্পী অভিনেত্রী উদ্যোক্তা সংকল্পের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আমাদের শিল্প সংস্কৃতি ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
প্রাণোচ্ছল এই শিল্পী অভিনেত্রী উদ্যোক্তা সংকল্পের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আমাদের শিল্প সংস্কৃতি ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তার জীবন সর্বাঙ্গীন সুন্দর, আলোকিত এবং কল্যাণময় হোক। সবশেষে তার শিকড় থেকে শিখরে উঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। সুচন্দা আজ দেশ ও জাতির অহংকার।
তথ্য সূত্র:
সাক্ষৎকার
/ যশোররে যশস্বী, শল্পিী ও সাহত্যিকি
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সাক্ষৎকার
/ যশোররে যশস্বী, শল্পিী ও সাহত্যিকি

সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও সম্পাদনা:
রাজবিুর রহমান (তপু)
প্রথম আপডটে:

জানুয়ারি ২০২০