
Home শিল্পী / Artist > ববিতা / Babita (1955)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 17655 বার পড়া হয়েছে
ফরিদা আক্তার পপি (ববিতা)
Farida Akhter Popy (Babita)
Home District: Jessore
পারিবারিক পরিচিতি:
ফরিদা আখতার (পপি), চলচ্চিত্রে ববিতা নামে পরিচিত। পিতার চকরি সূত্রে ববিতা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৫ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে। শৈশব ও কৈশরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে।
যশোরের বিজয় নগর গ্রামের এক সাংস্কৃতি অনুরাগী পরিবারে তাদের জন্ম। বাবা- নিজামুদ্দীন আতাউব (আবু) একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বি. জে. আরা ছিলেন একজন চিকিৎসক। তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় বোন সুচন্দা দেশের একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী। বড় ভাই শহীদুল ইসলাম একজন ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মেজভাই- ইকবাল ইসলাম একজন বৈমানিক। ছোট বোন গুলশান আখতার চম্পা এদেশের চলচ্চিত্রের একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রী এবং সবার ছোট ভাই- ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। দাদা বাড়ী যশোরের বিজয় নগর গ্রামে এবং নানা বাড়ী নড়াইলের চরবালী গ্রামে। পৈত্রিক বাড়ী যশোর শহরে সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিল।
শিক্ষাজীবন:
পড়াশোনা করেছেন যশোর দাউদ পাবলিক স্কুলে। স্কুলে পড়াকালীন বড় বোন কোহিনুর আক্তার চাটনী’র (সুচন্দা) চলচ্চিত্রে প্রবেশের সূত্রে সপরিবারে চলে আসেন ঢাকায়। গেন্ডারিয়ার বাড়ীতে শুরু হয় কৈশরের অবশিষ্টাংশ। চলচ্চিত্রে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জন না করলেও ববিতা ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে শিক্ষিত করে তোলেন। দক্ষতা অর্জন করেন ইংরাজীসহ কয়েকটি বিদেশী ভাষায়। নিজেকে পরিমাজিত করে তোলেন একজন আদর্শ শিল্পীর মাত্রায়।
চলচ্চিত্রে আত্নপ্রকাশ:
চলচ্চিত্রে আসেন মূলত বড়বোন সুচন্দার অনুপ্রেরনায় ১৯৬৮ সালে। বড় বোন সুচন্দা অভিনীত জহির রায়হানের ‘সংসার’ ছবিতে কিশোরী শিল্পী হিসেবে ববিতার আত্মপ্রকাশ। চলচ্চিত্রে তাঁর নাম হল ‘ববিতা’। কিশোরী শিল্পী হিসাবে যাত্রা শুরু করার পর তার দ্বিতীয় ছবিতে একক নায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ছবির নাম ‘পিচ ঢালা পথ’।
ববিতা তাঁর নায়িকাজীবনে সম্ভবতঃ সবচেয়ে বৈচিত্রময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অবিসাংবাদিত গ্লামার ও সৌন্দর্য তাঁকে কেবল স্বপ্ন দেবীর চরিত্রে আবদ্ধ রাখতে পারেনি।
‘অরুণোদয়ের অগ্নী স্বাক্ষীর" বর্বর পাক বাহিনী কর্তৃক ধর্ষিতা মেয়েটির দূরূহ চরিত্র দিয়ে যে বৈচিত্রের সন্ধান শুরু তা একের পর এক - ‘ডুমুরের ফুল’ এর নার্স, ‘বসুন্ধারা’র কুমারী মাতা, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র সমাজ নির্যাতিতা গোলাপী, ‘সুন্দরী’র ঝগড়াটে কিন্তু জীবন-বঞ্চিতা সুন্দারী ইত্যাদি চরিত্রে। তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বীকৃতি আসে যখন বিশ্ব নন্দিত, বরণ্যে চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘অশনী সংকেত’ ছবির নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে তাঁকে আহবান জানান।
‘অশনী সংকেত’ ছবির ‘অনঙ্গ বৌ’ চরিত্রে ববিতার অভিনয় ববিতাকে যেমন আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদা দেয় তেমনই এদেশের চলচ্চিত্রের শিল্পীদের দক্ষতার পরিচয়ও তুলে ধরে বিশ্ব সভায়।
ববিতার অভিনীত ছবির সংখ্যা দুই শতাধিকেরও উপরে। ষাটের দশকের শেষ সময় হতে শুরু করে এ পর্যন্ত, কি শিল্প মনস্ক ছবি, কি বণিজ্যিক ছবি সবখানেই তাঁর সাবলীল স্বাচ্ছন্দ` গতি তাঁর চরিত্র চিত্রনের বৈচিত্রময় দক্ষতা প্রমান করেছে। কখনও গ্রামের মেয়ে, কখনও রাজকন্যা, কখনও পকেটমার, কখনও মধ্যবিত্ত সংগ্রামী নারী, কখনও জীবনযুদ্ধে পর্যুদুস্ত মেয়ে, রূপকথার স্বপ্নকন্যা, কখনও প্রেমিকা সর্বত্রই সমস্ত চরিত্রেই তাঁকে গ্রহণ করেছে দর্শক বিশ্বাসযোগ্যভাবে।
অভিনয়ের পাশাপাশি ববিতা গড়ে তুলেছেন নিজস্ব চলচ্চিত্র সংস্থা ‘ববিতা মুভিজ’। প্রযোজনা করেছেন বেশ কিছু ব্যবসায়িক সফল ছবি।
ববিতার বিপরীতে অভিনেতা:
ববিতা সম্ভবতঃ সবচেয়ে বেশী সংখ্যক নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। রাজ্জাক, জাফর ইকবাল, উজ্জ্বল, আলমগীর, ওয়াসিম, ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, সুব্রত, জসিম, সোহেল রানা, জাভেদ, প্রমুখ বাংলাদেশী নায়কবৃন্দ ছাড়াও ভারতের সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়, পাকিস্তানের নাদিম, জাভেদ, ফয়সল ইত্যাদি নায়কের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
জুটি হিসাবে বিভিন্ন সময়ে রাজ্জাক-ববিতা, ববিতা-জাফর ইকবাল, ববিতা-উজ্জ্বল, ববিতা-ফারুক খুবই জনপ্রিয় হয়েছিলো।
রাজ্জাকের সঙ্গে অনন্ত প্রেম, বাদি থেকে বেগম, বদনাম, সোহাগ, সুখে থাকো, লাইলী-মজনু, তালাক, বিরহ ব্যাথা, ফুলশয্যা। জাফর ইকবালের সঙ্গে অন্তরঙ্গ, হারজিত, ফকির মজনু শাহ, অবুজ হৃদয়, প্রভৃতি। ফারুকের সঙ্গে, গোলাপী এখন ট্রেনে, কথা দিলাম, ইত্যাদি ছবি ব্যবসায়িক সাফল্যে ভাস্বর| প্রচুর বাণিজ্যিক ছবি করা সত্ত্বেও ববিতার প্রকৃত পরিচয় নন্দনতাত্বিক ছবির শিল্পী হিসাবে। এদেশের সমস্ত খ্যাতিমান পরিচালকের নির্দেশনায় তিনি অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে জহির রায়হান, চাষি নজরুল ইসলাম, সুভাষ দত্ত, আমজাদ হোসেন, কবির আনোয়ার প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সম্মাননা:
ববিতা এদেশের একমাত্র শিল্পী যিনি বার বার আমন্ত্রিত হয়েছেন পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে। তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মান ও পুরষ্কারে। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে ‘অনঙ্গ বৌ’ চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্যে বার্লিন আন্তর্জার্তিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ পুরষ্কারসহ ১৯৭৩ সালে ভারতের বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালি’ এসোসিয়েশন এর পুরষ্কার লাভ করেন।
তিনি অনবদ্য অভিনয় প্রতিভার স্বীকৃতি হিসাবে ভারতের ওয়ার্ল্ড ডেভোলপমেন্ট পার্লামেন্ট কর্তৃক ‘ডক্টরেট’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ‘বাদী থেকে বেগম’, ১৯৭৬ সালে ‘নয়ন মনি’ ১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধারা’ ও ১৯৮৮ সালে ‘রামের সুমতি’ ছায়াছবিতে অভিনয়ের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান।
এ ছাড়াও তিনি চারবার বাচসাস, রিয়ালিটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বারবার যোগদানসহ ববিতা কায়রো, রোম, বার্লিন, যুক্তরাষ্ট্র, চেকোশ্লাভাকিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে ও ব্রাজিলে বিশেষভাবে সম্মানিত রাষ্ট্রিয় অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত হন। এদেশের চলচ্চিত্র শিল্পী হিসাবে বিশ্বমানের মেধার পরিচয় আছে ববিতার।
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরষ্কার:
সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ এর জন্যে:
ভারতে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরষ্কার ১৯৯৩ সালে।
ভারতে বাংলা চলচ্চিত্র প্রসার সমিতি পুরষ্কার পান ১৯৭৩ সালে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি কর্তৃক বিশেষ পুরষ্কার।
বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার
১৯৭৫ সলে ‘বাদী থেকে বেগম’
১৯৭৬’ ‘নয়নমনি’
১৯৭৭’ ‘বসুন্ধারা’
১৯৮৫’ ‘রামের সুমতি’
১৯৯৬’ ‘পোকামাকড়ের ঘর বসতি’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি
১৯৭৪ সালে
১৯৭৭ সালে
১৯৮০ সালে
১৯৮৫ সালে
এছাড়াও ১৯৭২ সলে উত্তরন কর্তৃক আয়োজিত ‘জহির রায়হান পদক’।
পশ্চিম বাংলা প্রসার সমিতি কর্তৃক এবং ‘দিল্লী বিজ্ঞানভবন পুরষ্কার’ পান।
নন্দিনী ছবির জন্যে পাকিস্তানের জাতীয় চলচ্চিত্র পদক।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমালোচক পুরষ্কার।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এরশাদ কর্তৃক ‘এরশাদ পদক’
তথ্য সূত্র:
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
মার্চ ২০১২