
Home শিল্পী / Artist > বনানী চৌধুরী / Banani Choudhury (1924)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 17622 বার পড়া হয়েছে
বনানী চৌধুরী
Banani Choudhury
Home District: Magura, Sreepur
পাবারিক পরিচিতি:
পুলিশ কর্মকর্তা পিতা আফসার উদ্দীন আহমদ এর কর্মস্থল বনগাঁতে অবস্থানকালেই ১৯২৪ সালের মে মাসে বনানী চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ী বৃহত্তর যশোর জেলার (বর্তমান মাগুরা জেলা) শ্রীপুর থানার সোনাতনদি গ্রামে।
১৯৩৬ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন রাজ্জাক চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। রাজ্জাক চৌধুরী কলকাতা ওয়াক্ফ-এর কমিশনার ছিলেন। দুই সুসন্তানের জননী বনানী চৌধুরী চলচ্চিত্র জগত থেকে অব্যাহতি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কলকাতার ১নং পার্ক স্টীট, পার্ক সার্কস এর বাসায় বসবাস করেন।
শিক্ষাজীবন:
মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী গ্রামের স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। ১৯৩৬ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন এ, রাজ্জাক চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি কলকাতা ওয়াক্ফ -এর কমিশনার ছিলেন। উচ্চ শিক্ষিত স্বামী রাজ্জাক চৌধুরীর উৎসাহেই বনানী চৌধুরীর শিক্ষাজীবন বিকশিত হয়। ১৯৪১ সালে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে আই, এ. ও. বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
শিল্পীজীবন:
ছাত্রীজীবন থেকেই তাঁর শৈল্পিক প্রতিভার প্রতিফলন ঘটতে থাকে। এ সময় বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানের আকর্ষণ বৃদ্ধি করতো। বিদ্যালয়ের মঞ্চস্থ থিয়েটারগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ ও কবিতা আবৃত্তি করে ব্যাপক সুখ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
শৈশবকাল থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি দূর্লভ আকর্ষণ ছিল তাঁর। এই আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে স্বামী ও বন্ধু প্রতিম কথাশিল্পী মানিক বন্দোপাধ্যায় এবং সুলতান আহমদের উৎসাহ ও সহযোগিতায়।
তখনকার দিনে ধর্মীয় এবং সামাজিক কারণে রূপালী পর্দার বুকে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল একেবারে অকল্পনীয়। এই গোড়ামী পরিবৃত্ত সমাজের কু-সংস্কারকে উপেক্ষা করে রূপালী পর্দায় একটি নতুন মুখ সংযুক্ত হল। যাঁর আসল নাম বেগম আনোয়ারা নাহার চৌধুরী লিলি। পোষাকী নাম বনানী চৌধুরী।
চিত্র পরিচালক গুনময় বন্দোপাধ্যায় এর সহযোগিতায় এই অনবদ্য অভিনেত্রীকে ১৯৪৬ সালে সর্বপ্রথম ‘বিশ বছর আগে’ ছবিতে দেখা যায়। এই লাবন্যময়ী চিত্র তারকা এই ছবিতে এত নিখুঁত ও নৈপূণ্যতার সঙ্গে অভিনয় করলেন যে, চিত্রামোদীদের হৃদয়রাজ্যে স্থান করে নেন।
এরপর বিভিন্ন ছবির জন্য ডাক আসতে থাকে বনানী চৌধুরীর। ‘তপোভঙ্গ’, ‘চলার পথে’, ‘অভিযোগ’, ‘নন্দরামের সংসার’, ‘পূর্বরাগ’, ‘পরশ পাথর’, ‘মহাসম্পদ’, ‘শেষের কবিতা’, ‘মায়াজাল’, ‘বিশেষ ধোঁয়া’, ‘শোন বরনারী’, ‘আম্রপালী’, ‘ঝাঁসী কি রাণী’, ‘তপসী’ প্রভৃতি ছবিতে একের পর এক অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
বিশেষ করে ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রগার লুণ্ঠন’, ‘পথহারা’, ‘শাপমোচন’, ‘নিয়তি’ ও স্বাক্ষর ছবিতে বৈচিত্রপূর্ণ অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে নিজের এক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছেন তিনি।
১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় তিনি জহির রায়হান পরিচালিত ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবিতে অভিনয় করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের আরো কয়েকটি ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন।
১৯৪৬ সাল থেকে তিনি অদ্যাবধি বিভিন্ন ছায়াছবিতে যে সমস্ত খ্যাতনামা অভিনেতা অভিনেত্রীর সঙ্গে অভিনয় করে যশস্বী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ছবি বিশ্বাস, জহর গাঙ্গুলী, পাহাড়ী সান্যাল ও মলিনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।প্রমথেশ বড়ুয়া, নীতির বসু, আর হেমেন গুপ্ত ও জহির রায়হানের মত পরিচালকের নির্দেশনায় অভিনয় করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন তিনি।
চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও বনানী চৌধুরী কলকাতার মঞ্চ ও বেতারের সংগে সংযুক্ত ছিলেন।
তথ্য সূত্র:
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক: কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট:
মার্চ ২০১২