
Home মাগুরা জেলা / Magura District > মাগুরা জেলা পরিচিতি / Introduction of Magura District
এই পৃষ্ঠাটি মোট 21628 বার পড়া হয়েছে
মাগুরা জেলা পরিচিতি / Introduction of Magura District
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এক সমৃদ্ধ জনপদের নাম মাগুরা। ১৭৮৬ সালে বৃটিশ আমলে বাংলা প্রদেশের প্রথম গঠিত জেলা যশোর। কিন্তু একজন

মাগুরার নামকরণ :
মাগুরার নামকরণ করা হয় মুঘল যুগে। এর নামকরণ কিভাবে হয়েছে তা স্থিরভাবে বলা দুস্কর। কিংবদন্তী থেকে জানা যায় এক কালে সুন্দরবনের কাছাকাছি এই অঞ্চলে মগ জল দস্যুদের দারুণ উৎপাত ছিল। কুমার ও নবগঙ্গার তীরে অবস্থিত বর্তমান মাগুরা শহরে ছিল তাদের আখড়া। নদী পথে তারা বর্গীদের মতো দস্যুপনা করতো। তাদের নামেই মগরা থেকে মাগুরা হয়েছে। নেত্রকোণাতে ও দেখা যায় সেখানে মগরা নাকে একটি নদীও রয়েছে। বাংলাদেশে মাগুরা নামে আরো বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে, তবে জেলার মর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় আমাদের মাগুরা এখন শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। তবে কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে মুঘল নবাব মুর্শিদকুলী খার আমলে মগদের অগ্রযাত্রাকে যেখানে প্রতিহত করে ঘুরিয়ে দেওয়া হত সেই স্থানটির নাম রাখা হত মগ-ঘুরা। মগ-ঘুরাই পরবর্তীতে মাগুরা হয়েছে। মাগুরা তথা যশোর ফরিদপুর এলাকায় মগ- দস্যুদের অত্যাচার ও লুষ্ঠনের কাহিনী আজও ইতিহাসের এক বেদনাময় অধ্যায়। ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে’ প্রচলিত এই ছড়াটিও সে সময়ের প্রকৃত চিত্রই তুলে ধরেছে। মুহম্মদপুরের রাজা সীতারাম রায় ও যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য মগ-বর্গী দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। বলা চলে দস্যুদের এই দুই রাজাই প্রতিহত ও পরাজিত করেন। বহু মগ বর্গী সীতারামের কাছে আত্মসমর্পন করে এবং সেনাবাহিনী ও রাজ কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পান। আজকের মাগুরা শহরে তাদের নিবাসের ব্যবস্থাও করা হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান :
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মাগুরা জেলা। এ জেলার উত্তরে রাজবাড়ী জেলা পূর্বে রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলা, দক্ষিণে নড়াইল ও যশোর জেলা এবং পশ্চিমে ঝিনাইদহ জেলা দ্বারা বেষ্টিত। এটা ২৩০১৫ ও ২৩০১৫ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৯০১৫ ও ৮৯০৪২ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। মাগুরা জেলা শহরের উপর দিয়ে ৯০০ পূর্ব দাঘিমা রেখা চলে গিয়েছে। এ জেলাটির মোট আয়তন ১০৪৮.৬১ বর্গ কিলোমিটার। ৪০৪.৮৭ বর্গ মাইল। তার মধ্যে নদী সমৃদ্ধ ৩৫.২ বর্গকিলোমিটার (১৩.৫৬) মাইল।
আবহওয়া ও জলবায়ু :
বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৭.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন ১১.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ১৪৬৭ মিঃ মিঃ।
নদ-নদী ও বাওড় :
প্রধান নদ নদী গড়াই, মধুমতি, নবগঙ্গা এবং ফাটকি।
রামসাগর ও বুড়াল বাওড় উল্লেখযোগ্য।
শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা :
১৮টি ওয়ার্ড ও ৬১টি মহল্লা নিয়ে মাগুরা শহর গঠিত। শহরের আয়তন ২২.৯৫ বর্গ কিঃ মিঃ।
শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। এর মধ্যে পুরম্নষ ৫১.৫৯% এবং মহিলা ৪৮.৩১%। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৪ হাজার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে। শহরের অধিবাসীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৪৭.৬%।
প্রশাসন :
১৯৪৫ সালে মাগুরা যশোরের একটি মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং ১৯৮৪ সালে এটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। ৪টি উপজেলা, ১টি পৌরসভা, ১৮টি ওয়ার্ড, ৬১টি মহল্লা, ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৫৪৫টি মৌজা এবং ৭৭২টি গ্রাম নিয়ে জেলাটি গঠিত। উপজেলাগুলো হচ্ছে : মাগুরা সদর, মোহাম্মদপুর, শালিখা এবং শ্রীপুর। পৌরসভা হচ্ছে মাগুরা সদর। প্রথম জেলা প্রশাসক জনাব অরবিন্দ কর।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ :
কবি ফারুখ আহমেদ, ড. লুৎফর রহমান, সৈয়দ আলী আহসান (সাহিত্যিক), আমলা শঙ্কর (নৃত্য শিল্পী), বনানী চৌধুরী (অভিনেত্রী), দিদার ইসলাম (কুইক রেডিও’র আবিষ্কারক), আলহাজ্ব মাওলানা শাহসূফী তোয়াজ উদ্দীন আহমেদ (রহঃ), হযরত গরীব শাহ দেওয়ান (রহঃ)।
স্থাপত্য ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন :
নাদের ঘাট, পীর মোকারম আলীর সৌধ, গরীব শাহের সৌধ, রাজা সীতারাম রায়ের রাজবাড়ীর ধংসাবশেষ, রাজা শতরুজিৎ রায়ের রাজবাড়ী, দেবাল রাজার দূর্গকরণ, শ্রীপুরে বিরাট রাজার রাজবাড়ীর ধ্বংশবিশেষ, গোপাল গ্রামের মসজিদ (মুঘল আমলের), আঠারো খাদায় সিদ্বেশ্বরী মঠ এবং ন্যাংটা বাবার আশ্রম (শতোধা আশ্রম)।
ঐতিহাসিক ঘটনা :
১৮৫৯-৬০ সালের হাজরাপুরে নীলকুঠিকে কেন্দ্র করে নীল অভ্যুত্থান হয়। বরই, আমতলা নাহাটি ব্যপক নীল চাষের নিদর্শন। মহান মুক্তিযুদ্ধে জনগণ প্রায় ১৬টি ফ্রন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করেছিল। এসব যুদ্ধ মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। লুৎফুন্নাহার হেলেনার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও পরবর্তীতে তাঁর করুণ মৃত্যু জনগণ গর্বভরে স্মরণ করে।
মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন :
মাগুরা পিটিআই চত্ত্বরে গণকবর, ওয়াবদাপাড়া খাল, বিনোদপুর বাজার, গলাকাটা সেতু (ছাইঘারিয়া)। ছাইঘারিয়া স্মৃতি সৌধ পিটিআই প্রধান ফাটক মাগুরা বিশ্বরোড সংলগ্ন।
জনসংখ্যা :
মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষ ১৫ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৫০.৫৬%, মহিলা ৪৯.৪৪%, মুসলমান ৭৭.৮৯%, হিন্দু ২১.৮৯% এবং অন্যান্য .২২%।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান :
মসজিদ ৯৬৫টি, মন্দির ১৪১টি, গীর্জা ১টি, সৌধ ও পবিত্র স্থান ৩টি।
সাক্ষরতা :
গড় সাক্ষরতা ২৮.৫%। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫.২% এবং মহিলা ২০.৯%।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহ :
মহাবিদ্যালয় ১৫টি, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৯৪টি, জুনিয়র হাই স্কুল ১৬টি, মাদ্রাসা ৭৪টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬৬টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০১টি, স্যটেলাইট বিদ্যালয় ১৯টি, কিন্ডারগার্ডেন ৩টি, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১২৯টি।
সাংস্কৃতিক সংগঠন :
ক্লাব ১৭৩টি, গণগ্রন্থাগার ৩টি, সিনেমা হল ৩টি, থিয়েটার গ্রুপ ৫টি, অপেরা দল ২টি, সাহিত্য সমিতি ২টি, শিল্পকলা একাডেমী ১টি এবং মহিলা সংগঠন ৩টি।
স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত পত্রিকা ও সাময়িকী :
দৈনিক খেদমত, সাপ্তাহিক অঙ্গীকার, গ্রামীণ বাংলা (বিলুপ্ত), হিন্দু মুসলমান সম্মিলনী পত্রিকা (১৮৭৬), সাপ্তাহিক আনন্দ (১৯২৯), নবগংগা (১৯৪১), সাপ্তাহিক বাংলার ডাক (১৯৭২), সাপ্তাহিক রূপসী বাংলা (১৯৭২), সাপ্তাহিক মাগুরা বার্তা (১৯৮৫), সাপ্তাহিক গণসংবাদ এবং পাক্ষিক নবকাল (১৯৭২)।
প্রধান পেশা :
কৃষি ৫১.২৬%, মৎস ১.২২%, কৃষি শ্রমিক ১৯%, মুজুরী শ্রমিক ২.৫৩%, শিল্প ১.২৪%, ব্যবসা ৯.৩৭%, চাকুরি ৬.০১%, পরিবহন ২.৪৫% এবং অন্যান্য ৬.৯২%।
জমির ব্যবহার :
মোট আবাদযোগ্য জমি ৭৮৬৩.৬৬ হেক্টর। একক ফসল ৩৫.৬০%, দ্বিফসল ১৫.২৯% এবং ত্রিফলস ৪৯.১১%। সেচের আওতায় জমি ৫৬.৪৬%।
ভূমি নিয়ন্ত্রণ :
চাষীদের মধ্যে ১৫% ভূমিহীন, ২০% ক্ষুদ্র, ৪০% মাঝারী এবং ২৫% ধনী। মাথাপিছু জমি ০.১৪ হেক্টর।
প্রধান ফসল :
ধান, পাট, গম, তৈল বীজ, তুলা, আখ, মরিচ, পেঁয়াজ, হলুদ এবং বিভিন্ন ধরণের ডাল। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে নীল, বার্লি, চীনা এবং শস্য জাতীয় উদ্ভিদ।
প্রধান ফল :
আম, কাঁঠাল, কালো জাম, পেঁপে, বেল, নারিকেল, তাল, খেজুর এবং লিচু।
যোগাযোগ ব্যবস্থা :
পাকা সড়ক ২৫০ কি: মি:, আধা পাকা ১০০ কি: মি:, কাঁচা রাস্তা ৩৮৫০ কি: মি: এবং পানিপথ ২২ নটিক্যাল মাইল।
ঐতিহ্যবাহী পরিবহন :
পালকী (বিলুপ্ত), ঘোড়ার গাড়ী (প্রায় বিলুপ্ত) এবং নৌকা।
শিল্প ও কল কারখানা :
বস্ত্র কল, বল পেন শিল্প, প্লাস্টিক পাইপ কারখানা, সাবান কারখানা, বরফ কারখানা, চাল কল, বিড়ি কারখানা, লেদ কারখানা এবং ওয়েল্ডিং কারখানা। কুঠির শিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত, বাঁশ এবং বেতের কাজ, কামার, স্বর্ণ, কুম্ভকার, কাঠের কাজ এবং দরর্জী।
হাট বাজার ও মেলা :
হাট বাজারের মোট সংখ্যা ১০৫টি এবং মেলা ১৪টি।
প্রধান প্রধান রপ্তানী :
পাট, মরিচ, পেঁয়াজ, পান, তরিতরকারী এবং বাঁশ ও কাঠের সামগ্রী।
এনজিও তৎপরতা :
তৎপরতা চালাচ্ছে এমন এনজিওগুলির মধ্যে রয়েছে কেয়ার, ব্রাক, প্রশিকা, জাগরনী চক্র এবং এ ডি আই ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র :
জেলা সদর হাসপাতাল ১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪টি, শিশু হাসপাতাল ১টি, চক্ষু হাসপাতাল ১টি, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১টি, প্রসূতি ও শিশু হাসপাতাল ১টি, হৃদরোগ হাসপাতাল (বক্ষব্যাধি) ১টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩২টি এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৯টি।
তথ্য সূত্র :
বাংলা পিডিয়া
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
মোরিনা ইয়াসমিন হীরা
অনুবাদ :
কামাল নাসের, আরটিভি
সর্বশেষ আপডেট :
নভেম্বর ২০১১
More Information
dcmagura.gov.bd
wikipedia.org
wiktionary.academic.ru
bangladeshtalks.com
mahabub.5u.com
dcmagura.gov.bd
wikipedia.org
wiktionary.academic.ru
bangladeshtalks.com
mahabub.5u.com