
Home রাজনীতিবিদ / Politicians > মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ / Mostafa Faruque Mohammed (1942)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 4812 বার পড়া হয়েছে
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ / Mostafa Faruque Mohammed (1942)
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ
Mostafa Faruque Mohammed
Jhikargacha, Jessore

রাষ্ট্রদূত (অবঃ) মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ১৯৪২ সালের ২১ মার্চ যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা এ্যাডভোকেট মরহুম সেকেন্দার মোহাম্মদ মোসলেম। মাতা মরহুমা আমেনা খাতুন এলাকায় অত্যন্ত সুপরিচিত একজন মহিলা ছিলেন। জনাব মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ মাতা-পিতার ৮ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় ভাই মোস্তফা আনোয়ার মোহাম্মদ একজন যুগ্নসচিব ছিলেন। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে তিনি মারা যান। তৃতীয় ভাই মোস্তফা মারুফ মোহাম্মদ ২০০৩ সালে ইন্তেকাল করেছেন। ছোট ভাই মোস্তফা শরীফ মোহাম্মদ বর্তমানে হলিফ্যামিলি হাসপাতালের সিনিয়র শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট। বড় বোন রওনকানূর যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার ছিলেন। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। মেজ বোন রাহমাতানূর একজন শিক্ষিকা ছিলেন। সেজ বোন রাশেদানুর একজন বি, এ, বি, এড। সবার ছোট বোন রওশনানূর একজন সমাজকর্মী।

জনাব মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ১৯৬৮ সালে কুষ্টিয়ার মেয়ে মমতাজ হাবিবের সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্সসহ এম. এ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সোস্যাল ওয়েলফেয়ারে মাস্টার ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি একজন সমাজসেবী ও গৃহিণী। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। বড় মেয়ে হৃদি বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের বাসিন্দা এবং ছোট মেয়ে দিশা সোনাতা, ঢাকায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার একজন সিনিয়র প্রগ্রাম কো-অর্ডিনেটর।
শিক্ষাজীবন :
জনাব মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে গ্রামের পাঠশালাতে। এখানে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ১৯৫০ সালে তিনি তৃতীয় শ্রেণী না পড়ে ঝিকরগাছা হাই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি এখান থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তাঁর ফলাফল ছিল অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তিনি ৯ম স্থান অধিকার করেন এবং বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পান। ১৯৫৮ সালে তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে আই. এ পাশ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। আই. এ পড়াকালিন সময়ে ১৯৫৭ সালে তিনি যশোর এম. এম. কলেজের ছাত্র সংগঠনের হয়ে নির্বাচন করে সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে তিনি এখান থেকে অনার্স এবং ১৯৬২ সালে মাস্টার্স পাশ করেন। অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষাতেও তাঁর ফলাফল ছিল কৃতিত্বপূর্ণ। অনার্স পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেনিতে দ্বিতীয় এবং এম এ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
পেশাগত জীবন :
জনাব মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ পেশাগত জীবন শুরু করেন ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে। কিন্তু এ চাকরি তিনি বেশী দিন করেননি। ১৯৬৪ সালে তিনি ‘কমনওয়েল্থ স্কলারশিপ’ নিয়ে লন্ডনে পড়তে যান। ১৯৬৬ সালে লন্ডনে থাকতেই তিনি সি. এস. এস. পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং পাশ করে ফ




১৯৭৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। এই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে আরব ও ইসরাইলীদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধকালিন সময়ে তাঁর প্রস্তাবে বাংলাদেশের পক্ষ হতে মিশরে ১ লক্ষ পাউন্ড চা সাহায্য হিসেবে পাঠানো হয়েছিল এবং সেখানে বাংলাদেশের এ সাহায্য যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলো। মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের এই ‘‘চা-কূটনীতি’’ সেই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাংলদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে যথেষ্ট অবদান রাখে।


১৯৭৪ সালে জনাব মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ তৎকালীন দক্ষিণ এশিয়া এবং উপমহাদেশ দপ্তরের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ঐ সময়ে পাকিস্তান হতে যেসব বাঙালী আফগানিস্তান হয়ে দেশে ফিরে আসে তাদের দেখভাল করার জন্য তিনি ব্যস্ত থাকতেন। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সুসম্পর্কের যে সূত্রপাত হয় সেখানে প্রথম থেকেই তিনি জড়িত। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে স্থল সীমানা চুক্তি হয় সেখানেও জনাব ফারুক মোহাম্মদের কিছুটা অবদান ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির মধ্যে যে সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল তার প্রাথমিক কিছু কাজে তিনি অবদান রাখেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁকে এখান থে


২০০১ সালে তিনি চাকরি হতে অবসরে যান। অবসরের পর আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে কয়েক বৎসরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী সরকার সেই চুক্তি বাতিল করে। অতঃপর তিনি স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন।
রাজনীতিঃ
জনাব মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ২০০৮ সালে ৯ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দী জামায়াতে ইসলামী দলের প্রার্থী জনাব আবু সাঈদকে ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
বর্তমানে একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজার্তিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত। উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংসদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের মুখ্য সদস্য এবং বাংলাদেশ-ইরান সংসদীয় মৈত্রী কমিটির সভাপতি। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী সভার একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান।
কবি প্রতিভা :
ছোটবেলা হতেই তিনি লেখা লেখির সাথে জড়িত অছেন। মূলত: কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে কলকাতার সত্যযুগ পত্রিকার কিশোর মজলিস পাতায়। কবিতার নিচে প্রথম নিজের নাম দেখে তিনি অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পত্রিকাতে বহু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সবুজ পাতা নামক ‘দৈনিক লোকসেবক’ পত্রিকার একটি পাতায় তিনি মাঝে মধ্যে লিখতেন। ১৯৫৫ সালে ছোট্ট ফারুককে সবুজ পাতার পক্ষ থেকে সেরা শিশু সাহিত্যিক হিসেবে একটি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছিল। সেখানে আর একটা পত্রিকা দুই বাংলার স্কুলের ছাত্রদের মধ্য থেকে কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। তিনি সেই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। পুরস্কার হিসেবে ২৫ টাকার বইও পেয়েছিলেন। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি লেখালেখির সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। ইত্তেফাক, প্রথম আলো, যুগান্তর ইত্যাদি পত্রিকাতে তাঁর বেশকিছু বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি পড়াশুনা ও লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
ভারত, মিয়ানমার (বার্মা), রাশিয়া, ভিয়েতনাম, মিশর ও জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি ঐসব দেশের যেসব উন্নয়মূলক কর্মকান্ড দেখেছেন এবং যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, এর আলোকে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তিনি লেখালেখি করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। আজকের বাংলাদেশের সাথে অতীতের বার্মার কি মিল ছিল, অতীতের তুলনায় বার্মার আজকের অবস্থা, সেই তুলনায় বাংলাদেশ কোথায়, রাশিয়া কিভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং ভাঙ্গনের কারণ ও উন্নতির সম্ভাবনা, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভিয়েতনাম কিভাবে এত এগিয়ে গেল ইত্যাদি বিষয় তাঁর লেখনির মধ্যে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন। এসব লেখালেখির উদ্দেশ্য ছিল আমাদের দেশের মানুষ যেন কিছু শিখতে পারে।
তথ্য সূত্র :
সাক্ষাৎকার
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট :
৩০ জুন ২০১২